বৃদ্ধ সুফিয়া বেগমের আহার জোটে পরিত্যক্ত ধানের শীষ কুড়িয়ে
বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : শীতের সকালে ঘাসের উপরের শিশির বিন্দু পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। খালি পা ঠান্ডায় কাঁপছে তারপরও থামতে পারছেন না। কুয়াশাভেজা সরু মেঠো পথ ধরে হাতে একটি জরাজীর্ণ ব্যাগ আর অন্য হাতে লাঠিতে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে চলেছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম।
গন্তব্য ফসলের মাঠ। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর আর ভাঙা পা নিয়ে ধানের জমিতে পরিত্যক্ত শীষ কুড়িয়েই বেঁচে থাকার স্বপ্ন বুনছেন তিনি। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামে এই বৃদ্ধার বসবাস।
জীবনের কঠিন বাস্তবতায় ফসলের মাঠে ধান কাটা শেষে জমিতে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত ধানের শীষ সংগ্রহ করাই সুফিয়া বেগমের নিত্যদিনের কাজ। ভাঙা পা আর ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি নিয়ে জমির এক কোণে মাথা নিচু করে যখন তিনি ধান কুড়িয়ে নেন, তখন তার প্রতিটি পদক্ষেপেই ফুটে ওঠে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার এক করুণ চিত্র।
নিজের কষ্টের কথা জানাতে গিয়ে সুফিয়া বেগম বলেন, এক পা ভাঙা, চোখেও ভালো করে দেখি না। কিন্তু পেট তো খায় তাই ধানের শীষ কুড়াতে বেরিয়েছি। দৈনিক যেটুকু ধান পাই, তাতেই আল্লাহর রহমতে দিন চলে যাবে। এক মুঠো ধানও আমার কাছে বড় দয়া। স্বামী আব্দুল কাদের মারা গেছেন বহু বছর আগে।
একসময় ভরা সংসার থাকলেও এখন তিনি একা। বড় ছেলে ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন, সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকেন। ছোট ছেলে রিকশা চালান, কখনও নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। ছেলেদের নিজেদের সংসারই চলে অভাব-অনটনে।
বৃদ্ধা সুফিয়া জানান, বয়স্ক ভাতা হিসেবে যা পান, তা দিয়ে পুরো মাসের ওষুধ আর খাবারের খরচ মেটানো অসম্ভব। তাই পেটের দায়ে প্রতিদিন লাঠিতে ভর দিয়ে বের হতে হয়। কখনো ৫-৬ কেজি ধান কুড়িয়ে, আবার কখনো মানুষের দয়ায় পাওয়া খাবারেই দিন কাটে তার।
পাশের জমির কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, এই বয়সে শীষ কুড়ানো সত্যিই অমানবিক। নিয়মিত সরকারি বা বিত্তবানদের সহায়তা পেলে তাকে এতটা কষ্ট করতে হতো না। এ ব্যাপারে সুজালপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. সেলিম রেজা জানান, সরকারি কোনো বরাদ্দ এলেই তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন


_medium_1764598307.jpg)





