এনা পরিবহনের এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ১০৭ কোটি টাকা পাচারের মামলা
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনা ট্রান্সপোর্টের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি পরিবহন খাতে দীর্ঘদিনের চাঁদাবাজি ও আধিপত্য খাটিয়ে অর্জিত বিপুল অবৈধ সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট থেকে গতকাল মঙ্গলবার রমনা থানায় এই মামলা করা হয়। মামলায় এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ১০৭ কোটি ৩২ লাখ ৬১ হাজার টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। সিআইডির গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে এনায়েত উল্লাহ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নিজেদের অনুসন্ধানের বরাতে সিআইডি জানায়, খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১৯৯টি ব্যাংক হিসাবে মোট ২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা জমা হয়েছে। আর এসব হিসাব থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ২ হাজার ৭ কোটি টাকা।
এর মধ্যে 'এনা ট্রান্সপোর্ট'-এর ৪৩টি হিসাবে জমা হয় ৯৩৪ কোটি টাকা। 'এনা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ'-এর ৮টি হিসাবে জমা ৪১০ কোটি টাকা এবং এনায়েত উল্লাহর ব্যক্তিগত ৭৪টি হিসাবে জমা হয় ৪৫৯ কোটি টাকা। সিআইডি জানায়, চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্জিত এই বিপুল অর্থ অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে থেকে 'স্ট্রাকচারিং' বা 'স্মার্ট লেয়ারিং' কৌশল ব্যবহার করে নানা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ১০৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা পাচার করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্পদ জব্দের নির্দেশ অনুসন্ধান চলাকালে আদালতের আদেশে এনায়েত উল্লাহর ধানমন্ডির দুটি ফ্ল্যাট এবং রূপগঞ্জের দুটি প্লট ক্রোক (জব্দ) করা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া তার ও সহযোগীদের নামে থাকা ৫৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে স্থিতি রয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা।
সিআইডি আরও বলেছে, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান খন্দকার এনায়েত উল্লাহ আশির দশকের পরে পরিবহন ব্যবসায় নামেন। পার্টনারশিপে একটি পুরোনো বাস দিয়ে শুরু করলেও কয়েক বছরেই ২০টি বাসের মালিক হন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক ভোল পাল্টান। প্রথমে বিএনপির রাজনীতি এবং পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতন পর্যন্ত টানা ১৬ বছর তিনি পরিবহন খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। তিনি ও তার সহযোগীরা সিন্ডিকেট গড়ে বাস মালিকদের কাছ থেকে দৈনিক ও মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা আদায় করতেন।
কোনো রুটে নতুন বাস নামাতে হলে তাকে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হতো। এমনকি নতুন বাস নামানোর সময় মালিকানায় এনায়েত উল্লাহকে একটি ভাগ দিতে বাধ্য করা হতো। ঢাকার প্রতিটি টার্মিনাল এবং সারা দেশের পরিবহন মালিক সমিতিগুলো থেকে সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে তিনি এই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪(২) ধারায় এনায়েত উল্লাহ ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন

নিউজ ডেস্ক







