দিনাজপুরে শেখ হাসিনাসহ ১১৮ জনকে আসামি করে নাশতার মামলা

দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি : দিনাজপুরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪শ’ জনকে আসামি করে আদালতে এক জুলাইযোদ্ধা বাদি হয়ে নাশতার মামলা দায়ের করেছেন। গত সোমবার রাতে দিনাজপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আমিনুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, সোমবার দুপুরে দিনাজপুর অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সামিউল ইসলামের আদালতে জুলাইযোদ্ধা মোঃ হায়াত আলী বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। বিচারক মামলাটি গ্রহণ করেন এবং বাদির অভিযোগের বিষয় আগামী ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত করে দিনাজপুর সিআইডি জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদেশ প্রদান করেছেন।
মামলার বাদি মোঃ হায়াত আলী (৩১) দিনাজপুর সদর উপজেলার উত্তর শিবপুর গ্রামের মোঃ সানাউল্লাহ’র পুত্র। মামলায় অন্যতম আসামিদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক হুইপ ও আওয়ামী লীগ নেতা ইকবালুর রহিম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমদাদ সরকার, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মমিনুল ইসলাম, শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মোঃ শাহ আলম, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আজিজুল ইমাম চৌধুরীর পুত্র মোঃ আজিজুল ইকবাল চৌধুরী,ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোকছেদ আলী রানা,শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নওশাদ ইকবাল কলিংন্স, শ্রমিক নেতা শেখ বাদশাসহ ১১৮ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪শ’ জন আসামি রয়েছে।
মামলায় গত বছর ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পযন্ত কোঠাবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দিনাজপুর শহরে আহত জুলাইযোদ্ধাদের সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। মামলার বাদি হায়াত আলী অভিযোগ করেন, তিনি সহ একাধিক জুলাইযোদ্ধা গত বছর ৪ আগস্ট দুপুর ২টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত দিনাজপুর শহরে সদর জেনারেল হাসপাতাল মোড় থেকে তৎকালীন হুইপ ইকবালুর রহিমের বাড়ি এবং আদালত এলাকা পর্যন্ত আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
অংশ নেয়া আন্দোলনকারীদের ওপর আসামিরা দেশি ও আগ্নেয়াস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে রণক্ষেত্রে পরিণত করে। আসামিদের হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণে বাদিসহ বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। আহতরা গুরুতর অবস্থায় সে সময় সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আহতদের চিকিৎসা দিতে অবহেলা করে।
আরও পড়ুনফলে নিরুপায় হয়ে অনেক গুরুতর আহতরা হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত সদর উপজেলার রাণীগঞ্জ এহিয়া কলেজের ছাত্র রবিউল ইসলাম রাহুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
হায়াত আলী নিজে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরবর্তীতে গত বছর ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। দীর্ঘ সময় তিনি তার বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তাকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাইযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন।
এই ঘটনায় তিনি নিজে বাদি হয়ে প্রথমে সদর কোতয়ালী থানায় মামলা দাখিল করেছিলেন। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ গত তিন মাস অতিবাহিত হলেও মামলাটি রেকর্ড না করায় বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন বলে দাবি করেন।
মন্তব্য করুন