৯৩’তে যেমন আছেন আরিফুল হক

অভি মঈনুদ্দীন ঃ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের, মঞ্চের ও নাটকের জীবন্ত কিংবদন্তী অভিনেতা আরিফুল হক। অনেকেই প্রায় সময়েই তার কথা জানতে চান, তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন, আদৌ বেঁচে আছেন কী না। দীর্ঘদিন ধরেই সপরিবারে তিনি কানাডাতে আছেন। কানাডার হ্যামিলটন সিটিতে আছেন তিনি। এদেশের মঞ্চ নাটক, টিভি নাটক এবং চলচ্চিত্রাঙ্গন যাদের অভিনয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হচ্ছেন আরিফুল হক। বিগত প্রায় পঁচিশ বছর যাবত তিনি সপরিবারে কানাডায় অবস্থান করলেও মাঝে মাঝে মনের টানেই দেশের মাটিতে ছুটে আসতেন তিনি।
সর্বশেষ তিনি ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এরপর আর শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নয় বিধায় তার আর দেশে আসা কোনো ভাবেই সম্ভব হয়নি । কথায় কথায় আরিফুল হক একটি কথা এখন প্রায়ই বলেন, ‘আর মায়ায় জড়াতে চাই না, কারণ জানি না আর দেখা হবে কী না এদেশের মানুষের সঙ্গে, এদেশের মাটির ধুলোর পথে আর হাঁটা হবে কী জানা নেই, এদেশের দর্শকের জন্য অভিনয় করা হবে কী না তাও জানা নেই। তাই দেশে ফিরলে এমন ভাবনায় কেঁদে উঠে মন। মানুষ হয়ে এসেছি পৃথিবীতে, জানি চলে যেতে হবেই একদিন। কিন্তু বয়স, সময় সবমিলিয়ে যখন বারবার জানান দেয় চলে যাবার সময় এসেছে, তখন আর মন চায়না এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে। বারবার সেইসব প্রিয় প্রিয় মুখগুলোর কাছেই থেকে যেতে মন চায়। এখন আসলে পুরোটা সময়ই বিছানাতেই কাটে। মাঝে মাঝে স্ক্যাচে ভর করে রুমেই হাঁটি। বাসার যাবতীয় যা কিছু প্রয়োজন সব ছেলে এসে দিয়ে যায়। আমি আর আমার স্ত্রীই থাকি। বাইরে বের হওয়া নিষেধ। এভাবেই কাটছে জীবন। হয়তো কোনো একদিন শুনবে সবাই আমিও সবার মতো হারিয়েগেছি।’
১৯৩৪ সালের ১২ অক্টোবর জন্মগ্রহন করেছিলেন আরিফুল হক, ভারতের হাওড়া’তে। এরইমধ্যে ৯২ বছর পূর্ণ করে ৯৩’তে পা রাখলেন তিনি। একজন আরিফুল হকের অভিনয়ে দর্শক হেসেছেন, তার অভিনীনত চরিত্রের গভীরে দর্শক প্রবেশ করে কেঁদেছেন আবার তার অভিনীত খল চরিত্রগুলো দর্শককে ভাবিয়ে তুলেছেন যে তিনি এমন চরিত্রেও অভিনয় করতে পারেন! একজন সত্যিকারের পরিপূর্ণ অভিনেতার সফলতা এখানেই যখন তিনি বহুমাত্রিক চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন।
আরও পড়ুনগুণী এই চলচ্চিত্রাভিনেতা সর্বশেষ একে এম ফিরোজ বাবু পরিচালিত ‘প্রেম বিষাদ’ এবং প্রয়াত খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচালিত ‘গহীনে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘উত্তরায়ণ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এটি নির্মাণ করেছিলেন বিভূতি লাহা। বাংলাদেশে একমাত্র তিনি এবং অলিভিয়া যারা উত্তমকুমারের সঙ্গে একই চলচ্চিত্রে একই ফ্রেমে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
আরিফুল হক অভিনীত উল্লে¬খযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে ‘লালন ফকির’, ‘সারেং বউ’, ‘বড় বাড়ির মেয়ে’, ‘সূর্য কন্যা’, ‘সুন্দরী’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কথা দিলাম’, ‘নতুন বউ’, ‘এখনই সময়’, ‘পিতা মাতা সন্তান’, ‘তোমাকে চাই’ ‘দেশপ্রেমিক’, ‘ঘৃণা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’ ইত্যাদি।’ ছোটবেলায় নিজেকে একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন আরিফুল হক। তাই সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি তিনি কলকাতার ‘দক্ষিণী’ সঙ্গীত বিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীতের উপর চার বছরের ডিপ্লেোমা কোর্সও সম্পন্ন করেন তিনি। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নিয়েছিলেন বিভিন্ন ওস্তাদের কাছ থেকে। নজরুল সঙ্গীতে তালিম নিয়েছিলেন তিনি মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কাকার কাছে। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় চলে আসেন। এখানে এসেও স্বপ্ন ছিলো নিজেকে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু অডিশন দেবার পর নানান জটিলতার কারণে হলোনা। একসময় টেলিভিশনে অভিনয়ের তার সুযোগ আসে। এরপর থেকে অভিনয়েই নিজেকে জড়িয়ে নেন সরকারী চাকরী করার পাশাপাশি।
মন্তব্য করুন