কমছে কীটনাশক ব্যবহার
সিরাজগঞ্জে ফসলের পোকা দমনে জনপ্রিয় হচ্ছে আলোক ফাঁদ

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: কীটনাশক ব্যবহার না করে ক্ষতিকারক পোকা মাকড়ের কবল থেকে রোপা আমন ফসল রক্ষায় সিরাজগঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আলোক ফাঁদ। বিশেষ করে এখন ফসলের ক্ষতি করে এমন কারেন্ট পোকা, মাজরা পোকা, গান্ধি পোকা ও চুঙ্গি পোকাসহ বাদামী ঘাস ফড়িং দমনে জমিতে আলোক ফাঁদ বা পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার বেড়েছে। গত রোববার সরেজমিনে গিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ পদ্ধতি ব্যবহার দেখা যায়।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার চলতি বছর ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের কাটারী ভোগ, ব্রি-৯০, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫১, ব্রি-৩৪ ও ব্রি-৩৬ জাতের রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে।তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের লাউতা গ্রামের আশরাফুল ইসলাম, চাঁদপুর গ্রামের রাশেদ সরকার, গোন্তা গ্রামের আরমান সরকারসহ একাধিক কৃষক জানান, বর্তমানে রোপা আমনের কিছু জমিতে রাসায়নিক সার দেয়ার পর থেকেই কিছু বাদামী ঘাসফড়িং বা কারেন্ট পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা ও চুঙ্গি-মাজরাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে।
এসব পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষকরা কীটনাশকও ব্যবহার করছেন। এছাড়াও অনেক এলাকায় কৃষকরা কীটনাশক ব্যবহার না করে বা কম করে বিদ্যুত বা ব্যাটারিচালিত আলোর মাধ্যমে রোপা আমনের জমি গুলোতে আলোক ফাঁদ বা ডাল পুুতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। সাধারণত রাতে রোপা আমন জমির মাঝ খানে বা পোকা আসে এমন স্থানে শক্ত বাঁশ-কাঠ কিংবা তিনটি লোহা দন্ড দিয়ে কাঠামো বানিয়ে সেখানে একটি পাত্রের মধ্যে পানি ও ডিটারজেন্ট পাউডার মিশানো হয়।
পরে লোহা বাঁশ-কাঠের মাথায় একটি বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়। আর বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রাখার ফলে কিছুক্ষণ পর আলোর সাহায্যে ওই পাত্রে আসতে শুরু করে উপকারী ও অপকারী পোকা। এভাবে কৃষকেরা পোকা নিধন করে থাকেন।
আরও পড়ুনসেখানে উপকারী পোকা বেশি থাকলে তা ক্ষতিকারক পোকাকে প্রতিহত করতে পারলে সেখানকার রোপা আমন জমিতে আর কীটশানক ব্যবহার হয় না। আর উপকারী পোকা কম থাকলে তা ক্ষতিকারক পোকাকে প্রতিহত করার ক্ষমতা না থাকলে তখন কৃষি কর্মকর্তাদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কীটনাশক মাত্রানুযায়ী প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।
এতে কৃষক যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার না করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি ক্ষতিকারক কীটনাশক থেকে রক্ষা পায় উপকারী পোকা। এটাই আলোক ফাঁদ বা পাচিং পদ্ধতির সুফল। সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ.কে.এম মনজুরে মাওলা বলেন, রোপা আমনের ফসলি জমিতে আলোক ফাঁদ ও পাচিং ব্যবহারে জেলা কৃষকরা ভালো সুফল পাচ্ছেন।
পাচিং পদ্ধতিতে পুতে রাখা ডাল গুলোর উপরে পাখি বসে ফসলি জমির ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। যার ফলে আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। ফলে কৃষক জমিতে কীটনাশকের খরচে কমিয়ে অধিক ফলন উৎপাদন করতে পারেন।
মন্তব্য করুন