ভিডিও রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

হলিউডকে যেভাবে হারাল ইসরাইল

হলিউডকে যেভাবে হারাল ইসরাইল, ছবি: সংগৃহীত।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর যেটি দেখে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করেছে, সেটি ক্ষুধার্ত বা বোমার আঘাতে হাত-পা বিচ্ছিন্ন গাজার কোনো শিশুর ভিডিও নয়, সেটি ছিল গার্ডিয়ানের একটি ভিডিও প্রতিবেদন, যা চলতি গ্রীষ্মে তেলআবিবে ধারণ করা হয়েছিল। ভিডিও এবং প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিলেন গার্ডিয়ানের প্রতিবেদক ম্যাথিউ ক্যাসেল। এভাবেই গাজার নির্মম পরিস্থিতি সম্পর্কে বর্ণনা দেন মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদক জোসেফ ফাহিম।

ফাহিম জানান, ভিডিওটিতে দেখা গেছে, ইসরাইলিরা রৌদ্রকরোজ্জ্বল সমুদ্রসৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ব্যস্ত বাজারে কেনাকাটা করছে এবং কফিশপে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ক্যাসেল যুদ্ধবিরোধী এক বিক্ষোভ দেখতে পান; কিন্তু ওই বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি খুব সামান্যই সহমর্মিতা দেখানো হয়। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী এক বয়স্ক ইসরাইলি চিৎকার করে বলেন, ‘শোনো, ইউরোপীয় ও অস্ট্রেলিয়ানরা বোকা, তারা বুঝতে পারে না যে ইসলাম তাদের কাছেও আসছে।’ওই প্রতিবেদনে ইসরাইলের যেসব বাসিন্দার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাদের কেউ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সামান্যতম সমবেদনাও প্রকাশ করেনি। একইসঙ্গে ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নিহত ও অনাহারে থাকা ফিলিস্তিনিদের ছবিগুলোর সত্যতাও অস্বীকার করেছে।

একজন তরুণী দাবি করেন, ছবিগুলোর ৮০ শতাংশই নকল। তিনি ‘গাজাউড’ শব্দটির উল্লেখ করেনÑযা অবমাননাকর ‘প্যালিউড’-এর আদলে তৈরি। এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, গাজার বেশিরভাগ ছবিই বিশ্ববাসীর কাছে সহানুভূতি পাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলের ধ্বংসযজ্ঞ এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার যে চিত্র তুলে ধরেছে, তা ওই প্রতিবেদনের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় বেসামরিক হতাহতের যে সংখ্যা জানিয়েছে, সেটাও কেউ স্বীকার করেনি। এমনকি ইসরাইলি এক সেনা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সবকিছুর জন্য ৭ অক্টোবরকে দায়ী করেছে। হামাসের হামলার পর সবচেয়ে ঝামেলায় পড়তে হয় আরব লেখকদের। কারণ, যেকোনো সময় তারা ইসরাইলের তোপের মুখে পড়তে পারেÑএমন শঙ্কায় দিন কেটেছে তাদের। ফলে গাজা সম্পর্কে যেকোনো কিছু লেখার ক্ষেত্রে শব্দচয়ন থেকে শুরু করে বাক্যÑসবকিছুতেই নিজেরাই নিজেদের সেন্সর করতে শুরু করে। তাদের শঙ্কা, ভাষাগত ছোট একটি ভুল পশ্চিমা বিশ্বে তাদের ক্যারিয়ার ধ্বংসে বোমা বিস্ফোরণের মতো কাজ করবে।

ওই ঘটনার পর পশ্চিমা শিল্প ও বিনোদন ফিলিস্তিনের প্রতি ততটা সদয় ছিল না, যতটা তারা ইউক্রেনের প্রতি ছিল। হলিউড তৎক্ষণাৎ ইসরাইলের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বইমেলায় ফিলিস্তিন সমর্থনকারী শিল্পীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। পশ্চিমারা যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা সর্বদা প্রচার করে আসছে, তা এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ‘মিথ’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আদতে তারা ফিলিস্তিন বা মুসলিমদের পক্ষে কখনই জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এর আগে ৯/১১-পরবর্তী সংস্কৃতি পশ্চিমা শিল্পকলায় আরব ও ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্বের ধরনে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করে।

আরও পড়ুন

গত কয়েক বছরে গাজা নিয়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো জোনাথন গ্লেজারের ‘দ্য জোন অব দ্য ইন্টারেস্ট’। বেশিরভাগ সমালোচক ছবিতে উল্লিখিত একটি বিষয়ের মধ্যে তুলনা টানতে অনিচ্ছুক ছিলেন।

প্রয়াত পোলিশ-আমেরিকান ইহুদি ধর্মতত্ত্ববিদ আব্রাহাম জোশুয়া হেশেল লিখেছিলেন, ‘মন্দের প্রতি উদাসীনতা মন্দের চেয়েও বেশি ছলনাময়।’ এটি সমাজে অন্যায় কাজকে নীরবে সমর্থন দেয়।

কিন্তু ৭ অক্টোবর যা প্রকাশ করেছিল, তা মন্দের প্রতি উদাসীনতা নয়; বরং ‘উত্তর-সত্য’ যুগে মন্দ নিজেই এক ধরনের নির্মিত গল্প, যা মানুষ তাদের উদাসীনতা, পক্ষপাত ও নিজের প্রয়োজনে যৌক্তিক ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহার করে।

যুদ্ধের এ পর্যায়ে এসে এটা বলা যায়Ñমানুষ এখনো দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠিত ন্যারেটিভকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। তারা সত্য সামনে নিয়ে আসতে চায়।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এনসিপিকে শাপলা দেয়া ইসির এখতিয়ারে পড়ে না: সিইসি

আর্জেন্টিনা দলে দুঃসংবাদ

পাকিস্তানের ২৫ সীমান্তপোস্ট দখল ও ৫৮ সেনা হত্যার দাবি আফগানিস্তানের

হাইকোর্টের দ্বারস্থ কুমার শানু!

কাবরেরার বিদায় এবং হামজাকে অধিনায়কত্ব দেওয়ার পরামর্শ আমিনুলের

ইসরাইল গাজার চুক্তি মানবে-এটা বিশ্বাস করে না ইরান