বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের গৌরব, ‘হিউম্যান হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন চিত্রশিল্পী আব্দুর রাজ্জাক

শিল্পের মাধ্যমে মানবসম্প্রীতির বার্তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ ‘হিউম্যান হারমনি অ্যাওয়ার্ড–২০২৫’ অর্জন করেছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী আব্দুর রাজ্জাক প্রধান। মালদ্বীপের রাজধানী মালে-তে এক জমকালো আয়োজনে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) তাঁর হাতে এই আন্তর্জাতিক সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়, যা বিশ্বশিল্পের দরবারে বাংলাদেশের জন্য এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করলো।
শান্তি, সম্প্রীতি ও মানব উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সম্মান জানাতে আয়োজিত হয় "হিউম্যান হারমনি সম্মেলন ও সম্মাননা–২০২৫"। এই আয়োজনে বাংলাদেশের একজন শিল্পীর এমন স্বীকৃতি দেশের শিল্পাঙ্গনকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিঃসন্দেহে আরও গর্বিত করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্রের মৎস্য ও সামুদ্রিক সম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ মুথালিব। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, "শিল্প-সংস্কৃতিই পারে জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে।"
অতিথিদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন নেপালের প্রাক্তন সংস্কৃতি, পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী আনন্দ প্রসাদ পোখারেল; মালদ্বীপের অর্থনীতি ও পরিকল্পনা উপমন্ত্রী আহমেদ সাঈদ মুস্তাফা; ক্রীড়া, ফিটনেস ও বিনোদন উপমন্ত্রী হুসাইন নিহাদ এবং ইসলামিক বিষয়ক উপমন্ত্রী ও কিং সালমান মসজিদের ইমাম আব্দুল জালিল ইসলাম। এশিয়ান বিজনেস পার্টনারশিপ সামিটের নির্বাহী পরিচালক গোলাম ফারুক মজনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
শিল্পী আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘ পথচলা ও স্বীকৃতি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনকারী আব্দুর রাজ্জাক প্রধান তাঁর সৃজনশীলতা ও মৌলিক চিন্তার জন্য ছাত্রজীবন থেকেই সুপরিচিত। তাঁর দীর্ঘ শৈল্পিক যাত্রাপথ অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতিতে উজ্জ্বল। এর মধ্যে রয়েছে: তৈলচিত্রে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম পুরস্কার (১৯৯৯), আমিনুল ইসলাম বৃত্তি (১৯৯৭), নোনা মিয়া স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৫), ব্রিটিশ কাউন্সিল বেস্ট ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড (২০০৪)
আরও পড়ুন
দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ হামদান প্যালেসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত গ্যালারি ও সংগ্রহশালায় তাঁর মুরাল ও চিত্রকর্ম স্থায়ীভাবে স্থান পেয়েছে, যা আন্তর্জাতিক শিল্প সমালোচকদের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে।
আব্দুর রাজ্জাক প্রধানের শিল্পকর্ম আধুনিক বিমূর্ততাকে এক নতুন সংজ্ঞা দিয়েছে। বিশেষত, মার্বেল প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করে তৈরি তাঁর মুরালগুলোতে তিনি প্রকৃতির অন্তর্নিহিত ছন্দ, টেক্সচার এবং রঙের এক জাদুকরী সমন্বয় ঘটিয়েছেন। তাঁর ক্যানভাসে শৃঙ্খলা ও স্বতঃস্ফূর্ততার শৈল্পিক মেলবন্ধন দর্শককে এক গভীর নান্দনিক জগতে নিয়ে যায়। তাঁর এই স্বতন্ত্র ভিজ্যুয়াল ভাষাই সমসাময়িক শিল্পে তাঁকে এক অনন্য অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
এই আন্তর্জাতিক সম্মাননা প্রাপ্তির পর এক আবেগঘন প্রতিক্রিয়ায় শিল্পী রাজ্জাক প্রধান বলেন, “এই পুরস্কার আমার একার নয়, এ সম্মান সমগ্র বাংলাদেশের, আমার দেশের সকল শিল্পীর। আমি বিশ্বাস করি, শিল্পই পারে সব বিভেদ মুছে দিয়ে মানুষকে এক করতে। আমার শিল্পকর্ম সেই মানবসম্প্রীতিরই প্রতিচ্ছবি।”
আব্দুর রাজ্জাক প্রধানের এই অর্জন নি:সন্দেহে বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে আরও মর্যাদাপূর্ণ করলো এবং দেশের নবীন শিল্পীদের জন্য অনুপ্রেরণার এক নতুন বাতিঘর হয়ে থাকবে।
মন্তব্য করুন