ওষুধে ১০০ শতাংশসহ ট্রাক ও আসবাবপত্রে নতুন শুল্ক চাপালেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমদানিকৃত ওষুধ, ট্রাক ও আসবাবপত্রের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে আদানিকৃত ওষুধের ওপর আরোপ করা হয়েছে ১০০ শতাংশ শুল্ক।
আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এসব শুল্কে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া এশিয়ায় ওষুধ কোম্পানির শেয়ারেও বড় ধরনের ধস নেমেছে। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার আমদানিকৃত নানা পণ্যের ওপর নতুন করে কঠোর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ব্র্যান্ডেড ওষুধে ১০০ শতাংশ শুল্ক এবং ভারী ট্রাকে ২৫ শতাংশ শুল্ক। এসব শুল্ক আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যকর হবে।
মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বিভিন্ন নীতিতে শুল্ক বড় বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। এর আওতায় বিভিন্ন বাণিজ্য অংশীদারের ওপর ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক এবং নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে বিশেষ শুল্ক বসানো হয়েছে। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে এবং ব্যবসায়ী মহলে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এই ঘোষণায় অবশ্য বলা হয়নি, এসব নতুন শুল্ক জাতীয় শুল্কের সঙ্গে যুক্ত হবে কি না কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা জাপানের মতো বাণিজ্য চুক্তিভুক্ত দেশগুলো এতে ছাড় পাবে কি না। জাপান জানিয়েছে, তারা এখনো নতুন পদক্ষেপগুলোর সম্ভাব্য প্রভাব বিশ্লেষণ করছে।
ট্রাম্প আরও জানান, রান্নাঘরের ক্যাবিনেট ও বাথরুম ভ্যানিটিতে ৫০ শতাংশ এবং সোফা-চেয়ারসহ গৃহসজ্জার আসবাবপত্রে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এসব শুল্ক ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।
ট্রাম্প বলেন, “(এসব শুল্ক আরোপের) কারণ হলো— এসব পণ্য বিপুল পরিমাণে বাইরের দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকছে।”
এদিকে ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর এশিয়ার শেয়ারবাজারে ওষুধ কোম্পানির শেয়ারে পতন দেখা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সিএসএল কোম্পানির শেয়ার ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে, আর জাপানের সুমিতোমো ফার্মার শেয়ার পড়ে গেছে ৫ শতাংশের বেশি, আর হংকংয়ের হ্যাংসেং বায়োটেক ইনডেক্স কমেছে প্রায় ২.৫ শতাংশ। অন্যদিকে চীনের তালিকাভুক্ত আসবাব নির্মাতা কোম্পানির শেয়ার সূচকও কমেছে ১.১ শতাংশ।
আরও পড়ুনবিশ্লেষকদের মতে, এ পদক্ষেপ ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশলেরই অংশ, যেখানে তারা নতুন শুল্ক আরোপের জন্য আরও প্রতিষ্ঠিত আইনি কর্তৃত্ব ব্যবহার করছে। কারণ, তার আগের বৈশ্বিক শুল্ক পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, যেকোনো ব্র্যান্ডেড বা পেটেন্টযুক্ত ওষুধে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করলে এই শুল্ক থেকে ছাড় পাওয়া যাবে।
মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পসংগঠন সতর্ক করেছে, শুল্ক আরোপে তাদের শত শত বিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে।
ট্রাম্প মূলত শুল্ককে বৈদেশিক নীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। নতুন বাণিজ্যচুক্তি করতে, কোনও বিষয়ে ছাড় আদায় করতে এবং রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগে শুল্ককে ব্যবহার করছে ট্রাম্প প্রশাসন। প্রশাসনের দাবি, শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব আয়ের বড় উৎসে পরিণত হয়েছে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, এ বছর শেষ নাগাদ শুল্ক থেকে ৩০০ বিলিয়ন ডলার উঠতে পারে।
ট্রাম্প অবশ্য আগেও জাতীয় নিরাপত্তার নামে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, গাড়ি ও যন্ত্রাংশ এবং তামার ওপর শুল্ক বসিয়েছিলেন।
মন্তব্য করুন