ডাকসু নির্বাচনে ১২ দফা অনিয়মের অভিযোগ তুললো ছাত্র ইউনিয়ন

ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে নানামুখী অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা ১২ দফা অভিযোগ তুলে ধরে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে দাবি করে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মেঘমল্লার বসু বলেন, “গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলে আমরা প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলাম। আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসন ভেঙে দেওয়া প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত বিরাজনীতিকরণপুষ্ট সরকার, অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপটে আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। আমাদের প্রতি আস্থা রেখে যারা পাশে থেকেছেন—শিক্ষার্থী, ভোটার, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মী ও গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী মানুষদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।”
তিনি অভিযোগ করেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই একটি বিশেষ মহল তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। নির্বাচনের দিন ভুয়া প্রেস পাস ব্যবহার, প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ব্যর্থতার কারণে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়নি। “ফলে গোটা প্রক্রিয়াই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে,” বলেন মেঘমল্লার বসু।
আরও পড়ুনতিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম—জয়-পরাজয় যাই হোক, তাদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাব। সদ্য অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে অনিয়ম শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত ভোটাধিকারকে ব্যাহত করেছে। তবে আন্দোলন ও সংগ্রামের পথেই আমরা আছি।”
ছাত্র ইউনিয়নের উত্থাপিত ১২ দফা অভিযোগ:
১. টিএসসিসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছাড়াই ভোটার তালিকায় স্বাক্ষর দেওয়া এবং নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ব্যালট সরবরাহ।
২. ভোটার তালিকা ও সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশে প্রশাসনের অনীহা।
৩. ব্যবহৃত ব্যালটে কোনো ক্রমিক নম্বর না থাকা এবং ছাপানো, সরবরাহকৃত, বাতিল ও ফেরত ব্যালটের হিসাব গোপন রাখা।
৪. ব্যালট কোথায় ছাপানো হয়েছে তা প্রকাশ না করা; নকল ব্যালট ফাঁসের অভিযোগ।
৫. নীলক্ষেতের একটি ছাপাখানায় বিপুলসংখ্যক অরক্ষিত ব্যালট পেপার উদ্ধার হলেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি না থাকা।
৬. ওএমআর মেশিনে কারচুপির অভিযোগ—এক প্রার্থীর ভোট অন্য প্রার্থীর নামে প্রদর্শিত হওয়া।
৭. ভোট গণনা-পরবর্তী সফটওয়্যার পরীক্ষায় ভোটার ও প্রার্থীদের উপস্থিত না রাখা।
৮. ভোটের আগের রাতে এজেন্ট তালিকা প্রকাশ করে অনেক প্রার্থীর প্রস্তাবিত এজেন্ট বাদ দেওয়া।
৯. ভোটারদের আঙুলে অমোচনীয় কালি ব্যবহার না করা; একই ব্যক্তির একাধিকবার ভোট দেওয়ার অভিযোগ।
১০. ভোট গণনায় গড়িমসি, নির্দিষ্ট প্রার্থীর অবৈধ উপস্থিতি এবং পোলিং এজেন্টদের দূরে রাখা।
১১. পোলিং অফিসার নিয়োগে অস্পষ্টতা; প্রশাসন কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত অফিসারদের ভুয়া অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রভাবিত করা।
১২. অস্বচ্ছ ব্যালট বক্স ব্যবহার, মার্কার সংকট ও বলপেন দিয়ে ভোট গ্রহণের কারণে বহু ভোট বাতিল হওয়া।
মন্তব্য করুন