দীর্ঘ ৯ বছর বন্ধ থাকার পর চালু হচ্ছে বগুড়া জেলা সুইমিংপুল

স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ ৯ বছর বন্ধ থাকার পর বগুড়া জেলা সুইমিংপুল চালু হতে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানসহ বগুড়ার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেশ কয়েকজন সাঁতারু জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্বর্ণপদকসহ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখার পাশাপাশি বগুড়ার সুনাম বয়ে এনেছেন। আবার অনেক সাঁতারু সেনা ও নৌবাহিনীতে চাকরিও পেয়েছেন।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার এ প্রতিষ্ঠান সাঁতারে জেলার শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরতে বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজার প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকার পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কারের পর সুইমিংপুলটি খুব শিগ্গরই চালু হতে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত বিএনপি সরকারের সময় শহীদ চাঁন্দু স্টেডিয়ামসংলগ্ন স্থানে ২০০২ সালের ২১ নভেম্বর প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বগুড়া জেলা সুইমিংপুলটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন জাতীয় সংসদের হুইপ প্রয়াত রেজাউল বারী ডিনা। উদ্বোধনের পর ২০০৪ সালে এ সুইমিংপুলটিতে জাতীয় সাঁতার ফেডারেশনের আয়োজনে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত প্রতিযোগিতায় ৬শ’ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন।
এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সাঁতারু তৈরির প্রতিষ্ঠানটিকে। এছাড়াও বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছিল বগুড়া সুইমিংপুল। এরপর দীর্ঘ ১৪ বছর একটানা সাঁতারু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সাঁতার প্রশিক্ষণ নিয়ে বগুড়া থেকে বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা সাঁতারু তৈরি হয়েছেন। তারমধ্যে যারা সুনাম অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে, মরিয়ম আক্তার বয়সভিত্তিক জাতীয় সাঁতারে ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে স্বর্ণ পদক অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি কমনওয়েলথ গেমসে সুযোগ পান।
পরে তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চাকরি পান। সাঁতারু হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন নয়ন আলী। তিনি বয়সভিত্তিক জাতীয় গেমসে রেকর্ড অর্জন করেন এবং বেশ কয়েকবার স্বর্ণ পদক অর্জন করেন। এছাড়া বাংলা চ্যানেল খ্যাত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পাড়ি দেওয়া লং সুইমিং এ গোল্ড মেডেল অর্জন, জাতীয় পর্যায়ে ১০টি পুরস্কার অর্জনকারী রাব্বী রহমানের রেকর্ড এখন পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি।
এছাড়াও রাব্বী রহমান জাতীয় পর্যায়ে বয়সভিত্তিক সাঁতারে ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একাধিকবার গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। রাব্বী আগামী ২০ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার লং সুইমিং অংশ নিতে যাচ্ছেন।
তার সাথে অংশ নিবেন আরেক খ্যাতিমান সাঁতারু ঢাকার ক্রীড়া অফিসার ফেরদৌস আলম। তাছাড়াও বগুড়ায় সাঁতার প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন জুঁই আক্তার। জুঁই বয়সভিত্তিক জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। আন্তঃস্কুল জাতীয় পর্যায়ে সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বর্ষা। ২০২৪ সালে বিকেএসপি’তে সুযোগ পেয়েছেন আলীম।
আরও পড়ুনবগুড়া সুইমিংপুলের সাবেক প্রশিক্ষক সাবেক জাতীয় সাঁতারু আলালুর রহমান তিব্বত বলেন, উদ্বোধনের পর থেকে এ প্রতিষ্ঠানে প্রচুর মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সাঁতার শিখেছেন। সেসময় তিনিসহ তিনজন প্রশিক্ষক সাঁতার প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। অন্য দুইজন হলেন-রফিকুজ্জামান শাহীন ও নারী কোচ রুলি আকতার। বগুড়া সুইমিংপুলে শুধুমাত্র পেশাদার সাঁতারু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।
পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সের মানুষরা জীবন বাঁচাতে সাঁতার শিখতে বগুড়া সুইমিংপুল থেকে সাঁতার শিখেছেন। দীর্ঘ ১৪ বছরে বগুড়ায় অনেক খ্যাতিমান সাঁতারু তৈরি হয়েছে, যারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বগুড়ার জন্য সুনাম বয়ে এনেছেন। নানা কারণে বগুড়া সুইমিংপুলের কার্যক্রম ২০১৭ সাল থেকে বন্ধ হওয়ার পর সাঁতারু তৈরিতে অনেকটা ভাটা পড়ে। তারপরও তিনি থেমে না থেকে বগুড়া পৌরপার্ক পুকুর ও সদর উপজেলা পুকুরে সাঁতার শেখানোর কার্যক্রম চালিয়ে যান।
বর্তমানে তিনি বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-৪ এর পুকুরে প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, বয়সভিত্তিক সাঁতারে বগুড়ার নয়ন আলী, মোস্তাকিম, হানিফ, নিরব, রাইসুল, ছোট জুঁই, মাহি ভালো করেছে। রোকেয়া আক্তার নৌবাহিনীতে আর রায়হান সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন। এছাড়া বগুড়া থেকে ৩৮ জন সাঁতারু নৌবাহিনীর স্কলারশিপ নিয়ে ৬ অক্টোবর থেকে ঢাকায় শুরু হওয়া ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেছেন। তাছাড়া আরও এক খ্যাতিমান সাঁতারু শাওন সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন। তবে তিনি এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় অসহায় জীবন-যাপন করছেন।
সাবেক খ্যাতিমান জাতীয় সাঁতারু, বাংলাদেশ সাঁতার ক্লাব এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আমিনুল হক দেওয়ান সজল বলেন, সাঁতার না জানার কারণে প্রতি বছর পানিতে ডুবে ২-৩ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। সাবেক এই গোল্ড মেডেলিস্ট সাঁতারু বগুড়াবাসীর পক্ষ থেকে সুইমিংপুলে ফিল্টারিং সিস্টেম চালু করে পানি দূষিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে সুইমিংপুলকে আরও আধুনিকীকরণ করার দাবি জানান। যাতে পুনরায় জাতীয় পর্যায়ের সাঁতার প্রতিযোগিতা বগুড়ায় আয়োজন করা সম্ভব হয়।
এছাড়া এ সুইমিংপুলে দর্শক গ্যালারি তৈরি করা হলে ৪ থেকে ৫ হাজার দর্শক সাঁতার প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে পারবেন বলে তিনি জানান। বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার আহবায়ক হোসনা আফরোজা বলেন, সুইমিংপুলের সংস্কার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফেটে যাওয়া টাইলস মেরামত করা হয়েছে। তাছাড়া পানির পাম্পও পরিবর্তন করা হয়েছে। শিগ্গরই সুইমিংপুলের কার্যক্রম শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মন্তব্য করুন