বগুড়ার ধুনটে যমুনার চরের ঘাসে বেচে শতাধিক পরিবারের সংসার চলে

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে আশ্রিত শহিদুল ইসলাম নদী থেকে মাছ ধরে বিক্রি করেন। তবে বছরের বেশির ভাগ সময় তিনি যমুনার চরে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ঘাস কেটে বিক্রি করে সংসার চালান। শহিদুল একা নয়, তার মতো বাস্তুহারা শতাধিক পরিবারের সংসার চলে এখন ঘাস সংগ্রহ ও বিক্রি করে।
এক সময় ওদের গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ ছিল। ছিল অনেক জায়গা-জমি। অভাব শব্দটি ছিল ওদের কাছে অনুপস্থিত। যমুনার টাটকা মাছ, আবাদের শাক-সবজি আর গাভীর খাঁটি দুধের সঙ্গে চিকন চালের ভাত খেয়ে ওরা অভ্যস্ত ছিল। কিন্ত রাক্ষুসী যমুনা ওদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। বাস্তুহারা মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছে বাঁধে।
সংসার চালানোর জন্য পুরোনো পেশা বদলে ওরা নতুন পেশা বেছে নিয়েছে। দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য ছেলে-বুড়ো এমনকি আদরের ছোট ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে শ্রম বিক্রির পাশাপাশি যমুনার চর থেকে সংগৃহিত ঘাস হাট-বাজারে বিক্রির টাকায় ওদের সংসার চলে।
প্রতিদিন ভোরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে চর থেকে সবুজ ঘাস নিয়ে শহড়াবাড়ি বাঁধে ঘাসের হাটে আসেন ঘাস বিক্রেতারা। সেই ঘাস কিনে নেন কৃষক, গৃহস্থ, গরুর খামারিসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন। প্রতিদিন দুপুর পর্যন্ত ঘাস সংগ্রহ করে হাটে বিক্রি করে চাল, ডাল, নুন, তেল নিয়ে তারা বাড়ি ফেরেন। শহড়াবাড়ি বাঁধে ঘাসের হাট বসে প্রতিদিন দুপুরে।
আরও পড়ুনঘাস বেচাকেনা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ওই এলাকার ছোট খামারি আব্দুর রহিম বলেন, গরুকে কুঁড়া ভূষির সঙ্গে কিছু তাজা ঘাস খাওয়াতে হয়। তাই প্রতিদিন সকালেই এই হাট থেকে ঘাস কিনতে আসেন। এখানে চরে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কাঁচা ঘাস পাওয়া য়ায়।
এক সময়ের প্রতাপশালী গৃহস্থ শহড়াবাড়ি গ্রামের নাদু মিয়া জানায়, দেড় যুগ আগে তার সোনায় মোড়ানো সংসার ছিল। তিনজন বছরশাইল কাজের লোক ছিল। এক বছরে তার সব জমি যমুনার পেটে যায়। লেখাপড়া করেনি বলে নতুন কর্মসংস্থান করতে পারেনি। আজ তিনি নিঃস্ব।
নিজে এখন শ্রম বিক্রি ও ঘাসুড়ে হয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাচ্ছেন। ক্ষেত-খামারে তেমন কাজ না থাকায় যমুনার চর থেকে ঘাস কেটে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ঘাসের একেকটি আটির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা। পুঁজি ছাড়াই তিনি প্রতিদিন ঘাস বেঁচে আয় করেন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
মন্তব্য করুন