ডাকসু নির্বাচন : লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের দাবিতে সরব প্রার্থীরা
_original_1756063642.jpg)
সাকিব হাসান সজীব: আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীরা ছুটছেন এক হল থেকে আরেক হলে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করছেন সরাসরি যোগাযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, কলাভবন, মল চত্বর, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কার্জন হলসহ সর্বত্র বইছে নির্বাচনী হাওয়া।
তবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ছিল ২৫ আগস্টের আগে কেউ প্রচার চালাতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ প্রার্থীই এই নির্দেশনা অমান্য করে আগেই প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। ফলে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
কিছু প্রার্থীর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন যদি সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে না পারে, তবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। ছাত্রদল মনোনীত জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিমকে উদ্দেশ্য করে অনেক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন, তিনি নিয়ম ভঙ্গ করে স্লোগান দিয়েছেন এবং বিশাল সমর্থক নিয়ে সিনেটে গেছেন। অথচ নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
অন্যদিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, একটি প্যানেল শিক্ষার্থীদের রিডিং রুমে গিয়ে ভোট চাইছে, এতে শিক্ষার্থীরা বিব্রত হচ্ছেন। অপরদিকে উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন প্যানেলের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। তানভীর বারী হামিম দাবি করেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে টিএসসিতে তাদের একটি প্রোগ্রাম হয়েও গেছে, অথচ কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, “প্রশাসন যদি কোনো প্যানেলকে কম বা বেশি গুরুত্ব দেয়, তার প্রভাব নির্বাচনে পড়বেই। আমরা চাই, সব প্যানেল সমান সুযোগ পাক।”
স্বতন্ত্র এজিএস প্রার্থী আশিকুর রহমান জিম বলেন,“ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্ল্যাটফর্ম। কোনো রাজনৈতিক দলের যেন হস্তক্ষেপ না হয় এবং প্রশাসন যেন সমান সুযোগ নিশ্চিত করে—এটাই আমাদের দাবি। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির পথে কোনো বাধা আমাকে থামাতে পারবে না, যেমন জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ও বাধা দিতে পারেনি।”
প্রার্থীদের মতে, ডাকসু নির্বাচন কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবায়নের পথে বড় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে—
আরও পড়ুনইসলামী ছাত্রআন্দোলন মনোনীত এজিএস প্রাথী সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দীন কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। সেগুলো হলো:
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ: বড় ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রভাবের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সমানভাবে প্রচারণা চালাতে পারছেন না।
প্রশাসনের নিরপেক্ষতা: প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছে। শাসকদলের চাপের মুখে তারা নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
সহিংসতার আশঙ্কা: ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে সহিংসতা স্বাভাবিক ঘটনা। নির্বাচনকে ঘিরে সংঘর্ষ, দখল, অস্ত্র প্রদর্শন ইত্যাদির ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
প্রচারণার সময় সীমিত: মাত্র ১৪ দিনের প্রচারণা সময় যথেষ্ট নয়, ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো অসম্ভব।
আস্থাহীনতা: দীর্ঘদিন ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করেন নির্বাচন আগেই সাজানো।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ: জাতীয় রাজনীতির প্রভাব সরাসরি নির্বাচনে পড়ে, ফলে প্রকৃত ছাত্রসমাজের স্বার্থ অনেক সময় উপেক্ষিত হয়।
প্রার্থীরা সতর্ক করেছেন, এসব সমস্যা সমাধান না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে, যা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের জন্য কোনোভাবেই শুভ হবে না।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান বলেন আমরা চাই ডাকসু এমন একটি জায়গা হোক যেখানে প্রকৃত শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হবে। কিন্তু যদি নির্বাচনে সমান সুযোগ না থাকে, তাহলে আস্থার সংকট থেকেই যাবে।”
অপরদিকে আইন বিভাগের ছাত্র তানভীর আহমেদ বলেন, "ডাকসু নির্বাচনে বড় বড় ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রভাব থাকে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন পিছিয়ে না পড়ে, সেদিকে নজর দিতে হবে।"
ফলে এসব প্রশ্ন ডিল না করতে পারলে ডাকসু বানচাল হওয়ার আশঙ্কা ঘনীভূত হবে। যা কারো জন্যই কল্যাণকর নয়।
মন্তব্য করুন