ভিডিও রবিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫

ঝিনাইদহে সিরামিক কারখানার ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে ফসল-গাছপালা

ঝিনাইদহে সিরামিক কারখানার ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে ফসল-গাছপালা

ফসলের মাঠে গড়ে উঠেছে সিরামিক কারখানা। যেখানে তৈরি হয় টাইলস। কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও কাদাপানির প্রভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে আশপাশের এলাকার ফসল ও গাছপালার। কারখানাটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক পদ্ধতি না মেনে কোনোরকম জোড়াতালি চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

ঝিনাইদহের মহেশপুরের ফতেপুর ইউনিয়নের সাড়াতলা গ্রামে এমন চিত্র দেখা গেছে। তুষার সিরামিক নামে একটি কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ার প্রভাবে এলাকার ধান, পাট, কলাসহ ক্ষতির মুখে পড়েছে বিভিন্ন ফসল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খালিশপুর-জীবননগর সড়কের সাড়াতলা এলাকায় ফসলের মাঠে এ কারখানা গড়ে উঠেছে। ভরা ফসলের মাঠে কারখানার ধুলা-ধোঁয়ার ছড়াছড়ি। বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ। কারখানা থেকে নির্গত হচ্ছে কালো ধোঁয়া। কাঁচামালের পরিত্যক্ত কাদাপানি কারখানার দেওয়াল ঘেঁষে কৌশলে বের করে দেওয়া হচ্ছে বাইরের খালে। ফলে খাল ভরাট হয়ে গেছে বিষাক্ত রাসায়নিক ও সাদা ঘোলা কাদাপানিতে।

সিরামিক কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থের প্রভাবে খালিশপুর-জীবননগর সড়কের পার্শ্ববর্তী প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল এখন যেন ময়লা পানির ড্রেন।

স্থানীয়দের দাবি, কারখানার কাদাপানির প্রভাবে খাল পাড়ের অসংখ্য গাছ মারা গেছে। কিছু কিছু গাছ কারখানা কর্তৃপক্ষ রাতারাতি সরিয়ে ফেলেছে। এছাড়া কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া আশেপাশের মাঠের ধান, কলা ও পাটের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। ফসলের পাতা ও ডগা বিবর্ণ হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।

ফসলহানীর শিকার সাড়াতলা গ্রামের কৃষক শফিকুল বলেন, জমিতে ফলানো ফসল বিক্রি করে সংসার চলে। কারখানার ধোঁয়া ও বিষাক্ত পানির প্রভাবে আমার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। গত তিন বছর ধরে ফসলহানির কবলে পড়েছি। আমি ছাড়াও গ্রামের অনেক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

রাইসুল নামে অপর এক ভুক্তভোগী বলেন, উৎকট দুর্গন্ধে সড়কে চলাচল করা যায় না। খালে জমে থাকা রাসায়নিক মিশ্রিত পানির প্রভাবে মারা গেছে খালপাড়ের বহু গাছ। পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংস হলেও দেখার কেউ নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর কোন আইনে ফসলের মাঠে কারখানা প্রতিষ্ঠার অনুমতি দিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়।

আরও পড়ুন

জানা গেছে, ২০২০ সালে তুষার সিরামিক কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়। তারপর মহেশপুরের ফতেপুর ইউনিয়নের সাড়াতলা গ্রামে ফসলি জমিতে টাইলস কারখানা গড়ে তোলে। প্রথম দিকে জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করা হলেও কারখানায় বর্তমানে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এলপিজি। তবে আবাদি ধানী শ্রেণির জমিতে ভারি কারখানা তৈরির অনুমতি কীভাবে পেয়েছে তুষার সিরামিক কর্তৃপক্ষ, তা নিয়ে আছে নানা গুঞ্জন।

তুষার সিরামিক কারখানার পরিচালক মো. ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, নিয়মকানুন মেনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে কারখানা পরিচালনা করা হচ্ছে। যাবতীয় আইন মেনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কৃষকের যদি কারখানার কারণে ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে আমরা সেটি বিবেচনা করব।

গাছপালা মারা যাওয়া ও ফসলহানির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গাছ কেন মারা যাচ্ছে তা আমরা বলতে পারি না। অনেক গাছই তো মড়ক লেগে মারা যাচ্ছে। ফসল নষ্ট হওয়ার বিষয়ে কৃষকরা জানিয়েছেন। আমরাও যাচাইবাছাই করছি। কৃষকের দাবি থাকলে তা পূরণ করা হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ষষ্টী চন্দ্র রায় বলেন, এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে কৃষকের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছ। কৃষকের অভিযোগের সত্যতা পেলে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিস সরেজমিনে কাজ করছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুন্তাছির রহমান বলেন, কারখানার ধোঁয়া-বিষাক্ত পানির প্রভাবে পরিবেশ ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তথ্য উপাত্ত ও নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। স্থানীয় কৃষকের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। অভিযোগ জানার পরপরই সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সরকারি বরাদ্দের অর্থ প্রধান শিক্ষকের পকেটে

ভোটাররা চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসীদের পছন্দ করে না- গোলাম রব্বানী

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে কিশোরী গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, স্বামী আটক

কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেফতার

বগুড়ায় অস্ত্র আইনে ফুলতলার নান্টু মিয়ার কারাদণ্ড, ২১ বছরের সাজা

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কেটলি চুরি যুবকের জেল