রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে জামাই-শ্বশুরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ৪

তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি : রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে জামাই-শ্বশুরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো-সয়ার ইউনিয়নের বালাপুর গ্রামের আলীফ উদ্দিনের ছেলে আকতারুল ইসলাম (৪২), কুশা ইউনিয়নের রহিমাপুর খাঁন সাহেবপাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে মিহানুর রহমান (২৭), সয়ার বালাপুর গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে আলী ইবাদত হোসেন (৩০) এবং সয়ার ডারারপর গ্রামের জাফর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৫)।
এর আগে জামাই-শ্বশুরকে হত্যার ঘটনায় গতকাল রোববার নিহত রূপলালের স্ত্রী ভারতী দাস বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৭শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারাগঞ্জ থানার ওসি এমএ ফারুক জানান, দুইজন নিহতের ঘটনায় অজ্ঞতনামা ৭শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। ওসি বলেন, এ ঘটনায় কোন নির্দোষ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য সতর্ক আছি আমরা।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত ১০দিকে উপজেলার কুশিয়া ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলী এলাকায় রংপুরের তারাগঞ্জে আশীর্বাদের খরচ করতে গিয়ে ভ্যান চোর সন্দেহে ভাগ্নি জামাই ও শ্বশুরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন-উপজেলার কুশিয়া ইউনিয়নের ঘনিরামপুর মেডিকেল এলাকার রূপলাল দাস (৪১) এবং রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া ভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস (৩৫)।
তারা সম্পর্কে নাতনি জামাই ও শ্বশুর। সম্প্রতি রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয় রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুরের লালচাদ দাসের সঙ্গে। গতকাল রোববার রূপলাল দাসের মেয়েকে আশীর্বাদ করার জন্য জামাইয়ের পক্ষের লোকজন আসার কথা ছিল। এজন্য তিনি তার ভাগ্নি জামাই প্রদীপ দাসকে নিয়ে ভ্যানে চড়ে বুড়িরহাট বাজারে কেনাকাটার জন্য যান।
আরও পড়ুনবাজার শেষে নাতনী জামাই প্রদীপের ভ্যানে করে তারাগঞ্জ-হাজিরহাট হয়ে বাড়িতে ফেয়ার সময় বুড়িরহাট বাজার এলাকার বটতলী নামক স্থানে পৌঁছলে স্থানীয় কয়েকজন তাদের ভ্যান চোর সন্দেহে আটক করেন। সেখানে আরো কিছু লোকজন জড়ো হন। ভ্যানে থাকা রূপলাল দাসের ব্যাগে কয়েকটি প্লাস্টিকের বোতলে তরল কিছু দেখে এলাকার ভ্যানচালক মেহেদী হাসান ঘ্রাণ নিয়ে তিনি বমি করতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
এসময় জামাই ও শ্বশুরকে ভ্যান চোর সন্দেহ করে মারধর করতে করতে বুড়িরহাট বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। দু’জনেই ভ্যান চোর এমন কথা বলায় বাজারের জনসাধারণ উত্তেজিত হয়ে দুইজনকেই গণপিটুনি দিতে থাকেন। গণপিটুনির এক পর্যায়ে তারা দুজনে গুরুতর আহত হলে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় তারাগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক রূপলাল দাসকে মৃত ঘোষণা করেন। এসময় গুরুতর আহত প্রদীপ দাসকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তার করা হয়। ওদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোরে প্রদীপ দাসও মারা যান।
মন্তব্য করুন