নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ চিকিৎসকসহ ৬১টি পদ শূন্য
এম. সাখাওয়াত হোসেন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) : দেশজুড়ে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ। মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন ডাক্তারসহ মোট ৬১টি পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ উপজেলার মানুষ। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী এ উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ৩ লাখ ৮ হাজার ৬৫৫জন যা ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলমান ভ্যাপসা গরমের প্রকোপে ডায়রিয়া, কলেরা, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি ডাক্তারের সংখ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সকল বিভাগ) ১০টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ৩ জন।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল সার্জনসহ মোট মেডিকেল অফিসারের ১০টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ৫জন। ৫টি সাব সেন্টার ও ৫টি ইউনিয়ন সাব সেন্টারে মোট ১০টি মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন ১জন। নার্সের প্রধানসহ মোট ৪০টি নার্স পদ থাকলেও এ উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন ৩৩জন। স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৩টি পদে কর্মরত রয়েছেন ২জন। স্বাস্থ্য সহকারী ৪৫টি পদে কর্মরত রয়েছেন ১৬জন। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ৩৪টি পদে কর্মরত রয়েছেন ৩১ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাব সেন্টারসহ মোট ৬জন মেডিকেল অফিসার কর্মরত থাকলেও তাদের মধ্যে ভর্তি রোগীদের দেখভালো ২ জন ডে-নাইট করায় অফ-ডে, জরুরি বিভাগে ১জন মেডিকেল অফিসার ও দন্ত বিভাগে ১জন ডেন্টাল সার্জন চিকিৎসা দেন। প্রতিদিন বহিরবিভাগে মাত্র ২ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে উপজেলার সকল মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ থেকে ৫শ’জন রোগী বহিরবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসার কারণে মানুষের অনেক লম্বা লাইন ধরে চিকিৎসা নিতে হয়। জরুরি বিভাগে ৯০ থেকে ১১০টি রোগীর চিকিৎসা হলেও এর মধ্যে থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি জরুরি রোগী উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
আরও পড়ুন
সড়ক দুর্ঘটনা, মারামারি, জখমের মত জরুরি রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন না থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা গুরুতর অসুস্থ রোগীরা যথাসময়ে উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক সংকট, চিকিৎসা সামগ্রী, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও কারিগরি উপকরণের অভাবে হাসপাতালটি এখন নিজেই ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
এবিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. খুরশিদুল ইসলাম জানান, ডাক্তারসহ মোট ৬১টি শূন্য পদ পূরণের জন্য বারংবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। স্বল্পসংখ্যক ডাক্তার দিয়ে আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি তবে জনগণকেও ধৈর্যধারণ করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. অরিফুজ্জামান বলেন, এ উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষের দৈনন্দিন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে জেলা প্রশাসক স্যারসহ জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সভায় ডাক্তারসহ শূন্য পদ পূরণের জন্য বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। জনস্বার্থে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় ডাক্তারসহ শূন্য পদ পূরণের জোর দাবি জানান এ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
মন্তব্য করুন