করোনার নতুন ধরনের বিস্তারে দেশে সতর্কতা জোরদার

স্বাস্থ্যডেস্ক: নভেল করোনা ভাইরাস আবারো নতুন রূপে ফিরে আসছে। পাঁচ বছর আগে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ রূপ নেয়া এই ভাইরাস এখনো থেমে নেই। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় বাংলাদেশেও সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে। ঈদুল আজহার সময় মানুষজনের চলাচল ও ভিড় বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে নতুন করে তাগিদ দিয়েছে সরকার।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানায়, সাম্প্রতিক নমুনা পরীক্ষায় করোনার যেসব ধরন পাওয়া গেছে, সেগুলো হলো—এনবি.১.৮.১, এনএফ.৭, ও জেএন.১। এরা সবাই ওমিক্রনের উপধরন। আইইডিসিআরের এক কর্মকর্তা জানান, এই উপধরণগুলো দ্রুত ছড়ালেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণ হালকা থাকে— যেমন হালকা জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা বা সর্দি হতে পারে। তবে যাদের আগেই শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস আছে; তাদের জন্য এসব ধরণ বিপজ্জনক হতে পারে। দেশে পরীক্ষার হার কম হলেও যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তার ৭৫ শতাংশেই নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে, যা উদ্বেগজনক। ঈদের ভিড়ে মাস্ক পরার নির্দেশনা ঈদ উপলক্ষে মানুষ বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ভিড় করে বাড়ি গেছে। সেই ভিড়ে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ে। এজন্য সরকার গণপরিবহন ও জনসমাগমপূর্ণ জায়গায় মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা জারি করেছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় জানানো হয়, ঈদের সময় রেলস্টেশন এবং ট্রেনের অভ্যন্তরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। রেলকর্মীদের মাধ্যমে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে জীবাণুনাশক ছিটানো এবং জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। সীমান্তে স্ক্রিনিং কার্যক্রম
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা গণমাধ্যমে জানান, বেনাপোল সীমান্তে স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আগত যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। উপসর্গ থাকলে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে তাদের আইসোলেশনেও পাঠানো হচ্ছে। আখাউড়া, হিলি, বুড়িমারী ও অন্যান্য সীমান্ত পয়েন্টেও একই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
নজর এখন মার্কেট ও ধর্মীয় সমাবেশে
যেহেতু কোরবানির পশুর হাট শেষ হয়ে গেছে, এখন কর্তৃপক্ষের নজর মার্কেট ও গণজমায়েতের উপর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানান, করোনার নতুন ধরনগুলো অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। যদিও লক্ষণ হালকা, তবে সংক্রমণ হার বেশি। ঈদের সময়ে ঘন জনসমাগমে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে। এজন্য জেলা পর্যায়ে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বুস্টার ডোজ না নেওয়ায় ঝুঁকি
দেশে করোনা টিকার প্রাথমিক ডোজ নিয়েছেন প্রায় ৭৮ শতাংশ মানুষ। কিন্তু দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজ নেওয়ার হার এখনো ৩০ শতাংশের নিচে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রওশন হক সাংবাদিককে জানান, যারা বুস্টার ডোজ নেননি, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে। নতুন ধরনে আক্রান্ত হলে তাদের জটিলতা বেশি হতে পারে। তাই দ্রুত বুস্টার ডোজ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুনসর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শনিবারের (৭ জুন) তথ্যমতে, আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন কোনো মৃত্যুর খবর নেই। দেশে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ২১ হাজার ৭৪২ জনে এবং মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ৫০০। তবে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় প্রকৃত চিত্র অনিশ্চিত।
জনসচেতনতা এখন সবচেয়ে বড় অস্ত্র
করোনা এখন মৌসুমী সংক্রমণের মতো হলেও অবহেলা করলে ভয়াবহ হতে পারে। যারা বাইরে যান, মার্কেটে কেনাকাটা করেন, গণপরিবহনে চলাফেরা করেন তাদের সচেতনতা জরুরি।
জনসাধারণের জন্য করণীয়
বাইরে গেলে মাস্ক পরুন। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুতে থাকুন। হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখুন। উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে করোনা পরীক্ষা করুন। এখনো যারা বুস্টার ডোজ নেননি, তারা দ্রুত নিয়ে নিন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘‘করোনা আগের মতো ভয়াবহ নয়, তবে একে একেবারে হালকা করে দেখা ঠিক হবে না। নতুন ধরন, সীমান্ত থেকে আগত যাত্রী এবং ঈদের সময় ভিড়; সবকিছু মিলিয়ে সংক্রমণ ফের বাড়ার আশঙ্কা থাকছেই। এ জন্য ব্যক্তি সচেতনতা ও প্রশাসনিক উদ্যোগ সমানভাবে জরুরি।’’
মন্তব্য করুন