ভিডিও শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫

ডাকসু নির্বাচন দাবি নিয়ে সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলো

ডাকসু নির্বাচন দাবি নিয়ে সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলো

ঢাবি প্রতিনিধি : হয় ডাকসু, নয় পুরো প্রশাসনের পদত্যাগ এমন দাবিকে সামনে রেখে ঈদুল আজহার পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সক্রিয় সকল ছাত্রসংগঠন একযোগে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ঢাবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা করার। দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের গড়িমসি চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত গণঅনশনসহ কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে পারে সংগঠনগুলো। ঢাবি প্রশাসন এরমধ্যে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে জানিয়েছে, ঈদের আগে ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব নয়। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই ঘোষণায় ছাত্রসংগঠনগুলোয় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভের তৈরী হয়েছে।


ডাকসুর দীর্ঘসূত্রতা ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট: দীর্ঘ ২৮ বছর পর সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। এরপর থেকে নতুন করে নির্বাচনের দাবি থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা নিয়ে আর কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। তবে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তীব্র হয়। এরই অংশ হিসেবে ঢাবিতে ডাকসু নির্বাচনের দাবি আবারও সামনে আসে। এদিকে, প্রশাসন কিছু উদ্যোগ নিলেও, গত মে মাসে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম হত্যাকান্ডের পর অস্থিরতায় এই প্রক্রিয়া থমকে গেছে।
অনশন থেকে আশ্বাস, আশ্বাস থেকে হতাশা: ২১ মে ঢাবির ভিসি বাসভবনের সামনে অনশনে বসেন একদল শিক্ষার্থী। টানা ৮১ ঘণ্টা অনশন চলার পর ২৪ মে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ২ জুনের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠনের আশ্বাস দিলে তারা অনশন ভঙ্গ করেন। অনশনকারীরা ছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাসহ আরও দুই শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের সদস্য হিসেবে তিনজন শিক্ষকের নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন (উদ্ভিদ বিজ্ঞান), ড. এস এম শামীম রেজা (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা) ও ড. কাজী মারুফুল ইসলাম (ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ)। তবে এই উদ্যোগকেও ছাত্রসংগঠনগুলো ‘প্রতীকী অগ্রগতি’ বলে মনে করছে।

আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম গঠনের পথে: বিশ্ববিদ্যালয়ের ডান, মধ্য ও ইসলামী ঘরানার ছাত্রসংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা শেষ করেছে। অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো হচ্ছে, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্রশিবির, ইনকিলাব মঞ্চ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, জুলাই ঐক্য, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। ছাত্রদল আর বামপন্থী সংগঠনগুলো এখনও পুরোপুরি এই প্ল্যাটফর্মের অংশ না নিলেও ব্যক্তি পর্যায়ে কিছু যোগাযোগ চলছে বলে জানা গেছে। গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ শুরুতে যৌথ আন্দোলনের ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও পরে কিছুটা সরে আসে। সংগঠনটির নেতারা জানান, রাজনৈতিক ট্যাগিংয়ের ঝুঁকি এড়াতেই তারা এখনই কোনো চূড়ান্ত অবস্থান নিচ্ছেন না। তবে ইসলামপন্থীদের সাথে শুধুমাত্র বাম সংগঠনগুলো এক প্ল্যাটফর্মে আসলে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদও ইতিবাচক থাকবে। একইসাথে, ছাত্রদলকে নিয়ে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরির চিন্তাও রয়েছে তাদের।


মতপার্থক্য ও কৌশলগত অবস্থান: কিছু সংগঠন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছাতে আগ্রহী। তাদের মতে, সম্ভাব্য ডাকসু বিরোধী শক্তিকে আলোচনায় আনাই হবে বেশি ফলপ্রসূ। কিন্তু বেশিরভাগ ছাত্রসংগঠন মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর কঠোর চাপ প্রয়োগ ছাড়া ডাকসু নির্বাচন আদায় সম্ভব নয়।
ছাত্রদলের বিরুদ্ধে নির্বাচন না চাওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিন বলেন, আমি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হয়ে এমন কিছু জানি না। ছাত্রদল ডাকসু চায় না এটা সঠিক তথ্য নয়। আমরা প্রশাসনের সাথে হওয়া প্রতিটি আলোচনায় অংশ নিয়েছি।


নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট ক্ষোভ ও প্রত্যাশা: গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, প্রশাসনের মধ্যে আমরা ডাকসু নির্বাচনের প্রতি কোনো আন্তরিকতা দেখিনি। ঈদের মধ্যেই আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর প্রস্তুতি চলছে। ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, সব সংগঠন একমত হলেও এখনো কোনোকিছু চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, যে দিন অনশন ভাঙা হয়েছিল, সেই দিনই আমরা উপাচার্যের আশ্বাস বাস্তবায়নের আশা করেছিলাম। কিন্তু ভিসি সম্পূর্ণ হতাশ করেছেন আমাদের। স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক জালালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ বলেন, ডাকসু আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এটি আর বিলম্ব হতে পারে না। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে ব্যর্থ হলে, আমরা প্রশাসনের পদত্যাগের ডাক দিব।

আরও পড়ুন


ঢাবির ডাকসু নির্বাচন কেবল একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যৎ, প্রতিনিধিত্ব এবং গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতীক। একাধিক মতাদর্শ, পন্থা ও সংগঠনের সমন্বয়ে ডাকসু আন্দোলনের সম্ভাব্য নতুন মঞ্চ গঠনের যে আলামত দেখা যাচ্ছে, তাতে ঈদের পর ক্যাম্পাসে ফের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

 


মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘কালো মানিক’কে গ্রহণ করেননি খালেদা জিয়া

করোনায় ঢাকায় ১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩

কালুরঘাট সেতুতে ট্রেন-অটোরিকশা-বাইক সংঘর্ষ

ঈদের কয়েকদিন চার লাখ দর্শনার্থীর আশা চিড়িয়াখানায়

আন্দোলন স্থগিত করল পবিস

বুলু ও দুদুকে সতর্ক করল বিএনপি