আত্মঘাতী ড্রোন নৌকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে তাইওয়ান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তাইওয়ান নিজেদের নৌ প্রতিরক্ষা জোরদার করতে চলতি মাসের শেষের দিকে নিজস্ব নির্মিত আত্মঘাতী সমুদ্র ড্রোন নৌকার পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
এটি কুয়াই চি প্রকল্প নামে পরিচিত, যা তাইওয়ানের শীর্ষ অস্ত্র নির্মাতা সংস্থা ন্যাশনাল চুং-শান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এনসিএসআইএসটি)–এর তত্ত্বাবধানে উন্নয়নাধীন। সোমবার এক সামরিক সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসেই এর যুদ্ধ-সক্ষমতা মূল্যায়ন শুরু হবে, এবং বছর শেষে আরও কিছু উন্নত পরীক্ষা চালানো হবে।
সূত্রটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, সবকিছু পরিকল্পনামাফিক হলে, আগস্টে দক্ষিণ তাইওয়ানে একটি নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র মহড়ার সময় এই ড্রোনটি লাইভ যুদ্ধ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাবে।
এই প্রকল্পের জন্য তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৮০০ মিলিয়ন নিউ তাইওয়ান ডলার (প্রায় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ করেছে। নির্মাণ কার্যক্রমের দায়িত্বে রয়েছে লুংতেহ শিপবিল্ডিং কোম্পানি, যাদের তিনটি আক্রমণাত্মক এবং একটি লক্ষ্যবস্তু ইউএসভি নির্মাণের চুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এনসিএসআইএসটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে সমস্ত পরীক্ষা সম্পন্ন করে ২০২৬ সালে বৃহৎ আকারে উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এক সামরিক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেনাবাহিনী উপকূলীয় হামলা অভিযানের সহায়তায় ২০০টিরও বেশি নৌ ড্রোন সংগ্রহ করতে চায়।
প্রকল্পসংক্রান্ত নথিপত্র অনুযায়ী, আক্রমণাত্মক নৌযানটির দৈর্ঘ্য ১০ মিটার-এর কম, পূর্ণরূপে বোঝাই অবস্থায় এর ওজন চার টনের কম এবং পানিতে ডুবে যাওয়ার গভীরতা ০.৫ মিটার-এর নিচে থাকবে। লক্ষ্যবস্তু নৌযানটি ১৭ মিটার-এর কম লম্বা হবে এবং ওজন হবে ১৯-২০ টনের মধ্যে।
প্রতিটি আক্রমণ নৌযান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত লক্ষ্যনির্ধারণ ও পরিচালনা ব্যবস্থায় সজ্জিত থাকবে, যা শত্রুপক্ষের নৌযানকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করে আঘাত হানতে সক্ষম হবে। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, পরিসর, নির্ভুলতা, গতিশীলতা, স্বয়ংক্রিয়তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—এই উপাদানগুলোই তাইওয়ানের অসমমিত প্রতিরক্ষা কৌশলের মূল অংশ, এবং ২০০ ইউনিট তৈরি কেবল শুরু মাত্র।
আরও পড়ুনএই প্রকল্পের পাশাপাশি, এনসিএসআইএসটি আগামী ১৭–১৮ জুন ইয়িলান কাউন্টির সু’আও উপকূলে একটি দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনী আয়োজন করবে। এখানে ইউএসভির স্থির ও লাইভ প্রদর্শনীর মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন বহুমুখী সামুদ্রিক কার্যক্রম উপস্থাপন করা হবে—যেমন আক্রমণ, টহল, উদ্ধার অভিযান, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও রসদ সরবরাহ।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, এই প্রদর্শনীতে সাতটি তাইওয়ানি ও পাঁচটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। থান্ডার টাইগার টেকনোলজিস, কার্বন-বেইসড টেকনোলজি, কোরাম ইয়টস ইন্টারন্যাশনাল ও লুংতেহ শিপবিল্ডিং—এই চারটি প্রতিষ্ঠান সাগরে লাইভ ডেমোতেও অংশ নেবে।
পরীক্ষাগুলোর মধ্যে থাকবে ইলেকট্রো-অপটিকাল ইমেজিং, গতি, দূরবর্তী নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা, স্থল পরিবহনযোগ্যতা, সমুদ্র অভিযোজন, ভার বহনের ক্ষমতা, নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা, কাঠামোর নকশা ও উপাদান গুণগত মানের মূল্যায়ন।
তবে এই ইভেন্টে প্রদর্শিত হবে না সিএসভিসি কর্পোরেশন তাইওয়ানের সামরিক ইউএসভি এন্ডেভার মান্টা ও এনসিএসআইএসটি–এর গোপন কুয়াই চি আত্মঘাতী নৌকা।
এনসিএসআইএসটি জানিয়েছে, প্রদর্শনীতে শুধু বাণিজ্যিক ও দ্বৈত ব্যবহারের প্রযুক্তি দেখানো হবে, গোপন যুদ্ধ সক্ষমতা নয়। সংস্থাটির সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের কর্মকর্তা সান চুন-চিং বলেছেন, এই নৌকা সম্পূর্ণ পরীক্ষা উত্তীর্ণ হলে সেপ্টেম্বরের তাইপে অ্যারোস্পেস অ্যান্ড ডিফেন্স টেকনোলজি প্রদর্শনীতে তা জনসমক্ষে আনা হতে পারে।
চীন বরাবরই তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে এবং এটি ফিরিয়ে আনতে বলপ্রয়োগের পথ খোলা রেখেছে।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশ—যুক্তরাষ্ট্রসহ, যারা তাইপের প্রধান আন্তর্জাতিক মিত্র—তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তবে ওয়াশিংটন বলপ্রয়োগে দখলের বিরোধিতা করে এবং আইনগত বাধ্যবাধকতায় তাইওয়ানকে আত্মরক্ষার অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে।
মন্তব্য করুন