ভিডিও বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫

গ্রাহকের ২শ' কোটি টাকা নিয়ে রেইনবো হাসপাতাল ও এমসিএস'র চেয়ারম্যান লাপাত্তা

গ্রাহকের ২শ' কোটি টাকা নিয়ে রেইনবো হাসপাতাল ও এমসিএস'র চেয়ারম্যান লাপাত্তা

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়ায় এক সাবেক শিবির নেতার খপ্পরে পড়ে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ হাজারের বেশি নেতাকর্মী সর্বস্বান্ত হয়েছেন। সাবেক শিবির নেতা আমিরুজ্জামান পিন্টু ‘রেইনবো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামের প্রতিষ্ঠান খুলে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সর্বস্বান্ত জামায়াত নেতাকর্মীরা টাকা আদায়ে আজ সোমবার (২ জুন) পিন্টুর বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, প্রায় এক যুগ আগে বগুড়া শহরের গালাপট্টিতে ‘রেইনবো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন আমিরুজ্জামান পিন্টু। ফারইস্ট ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের চাকরি ছেড়ে পিন্টু এই প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। সোসাইটির আওতায় রেইনবো হোমস, রেইনবো কৃষি উন্নয়ন সংস্থা এবং শহরের শেরপুর রোড কলোনিতে রেইনবো হাসপাতাল চালু করেন।

এসব প্রতিষ্ঠানে অর্থলগ্নি করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন তিনি। পিন্টু একজন সাবেক শিবির কর্মী হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা তার প্রতিষ্ঠানে অর্থলগ্নি করতে থাকেন। বিভিন্ন মেয়াদে ভিন্ন ভিন্ন মুনাফায় তারা পিন্টুর হাতে লাখ লাখ টাকা তুলে দেন। শরিয়াভিত্তিক সুদমুক্ত অর্থনীতির কথা বলে ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছ থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিতে থাকেন তিনি।

বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজের সাবেক অধ্যাপক ফজলার রহমান জানান, তিনি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর যা পেয়েছিলেন তা থেকে ২০১৬ সালে প্রথমে চার লাখ টাকা পিন্টুর প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। তিনি জানান, বিভিন্ন মেয়াদে লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে মুনাফা দিতেন তিনি। একারণে বেশিরভাগ মানুষ শরিয়াভিত্তিক মনে করে অর্থলগ্নি করেন।

পর্যায়ক্রমে তিনি টাকা দিতে থাকেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালে তিনি একবারে ৫০ লাখ টাকা তার হাতে তুলে দেন। তার স্ত্রী এবং ছেলের কাছ থেকে নেওয়া ছাড়াও তিনি জমি বিক্রি করে পিন্টুকে টাকা দেন। সেসময় তার বিনিয়োগের পরিমাণ দাড়ায় ৯০ লাখ টাকা। এরমধ্যে তিনি ৭ লাখ টাকা ফেতর নিয়েছেন। এখনো তিনি ৮৩ লাখ টাকা পাবেন। সাবেক এই অধ্যাপক জানান, পাঁচ হাজারের বেশি গ্রাহকের ৯০ ভাগ জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। পিন্টু শরিয়াভিত্তিক সুদমুক্ত অর্থনীতির কথা বলে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিতেন।

আরও পড়ুন

তিনি বলেন পাঁচ হাজারের বেশি গ্রাহকের প্রায় ২শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ২০২৪ সাল থেকে আর টাকা ফেরত ও মুনাফাও দিচ্ছেন না। তার সাথে গ্রাহকেরা কথা বললে তিনি গত ১৫ মে টাকা  দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সে সময় গ্রাহকেরা তার বাড়ি এবং রেইনবো হাসপাতালে যান। পরে তিনি জানান ২২ মে টাকা ফেরত দিবেন। ওই দিন গ্রাহকেরা তার বাড়িতে গেলে তিনি সর্বশেষ ২ জুন টাকা দেওয়ার কথা বলেন।

আজ সোমবার (২ জুন) গ্রাহকেরা তার বাড়িতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে পুলিশ বাড়িতে প্রবেশ করলেও পিন্টুকে পাওয়া যায়নি। পরে সাধারণ গ্রাহকেরা শহরের কলোনিস্থ রেইনবো হাসপাতালে যান। সেখানেও তাকে পাওয়া যায়নি। ওই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা তোতা মিয়াকে গ্রাহকেরা ঘেরাও করলে তিনি কিছু গ্রাহককে সামান্য পরিমাণ টাকা দিয়ে ছাড়া পান। তবে পিন্টু অধরা রয়ে গেছেন।

বগুড়া শহর জামায়াতে ইসলামীর আমির আবিদুর রহমান সেহেল জানান, আমিরুজ্জামান পিন্টুর সাথে জামায়াতের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। তিনি কোন দিন জামায়াতের কোন ইউনিটের সদস্য ছিলেন না। তবে ৯০ দশকে ছাত্র রাজনীতির সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। সেসময় তিনি শিবিরের কর্মী ছিলেন। শিবির থেকে যাওয়ার পর তিনি আর রাজনীতি করেননি। এই জামায়াত নেতা জানান, তার দলের পক্ষ থেকে বারবার এ ধরনের সমিতি বা এনজিও’র সাথে জড়িত না থাকতে বলা হয়েছে। তারপরও জড়িত হওয়া দুঃখজনক।

বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান বাসির জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন, ভুক্তভোগীদের কথা শুনে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে কেউ মামলা করার জন্য আসেননি। মামলা করলে প্রযোজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘এখন থেকে ভুল সংবাদ পরিবেশন করলে ব্যবস্থা’

আটক বিএসএফ সদস্যকে পতাকা বৈঠকে হস্তান্তর

দায়িত্ব ছাড়ছেন নিউজিল্যান্ডের সফলতম কোচ স্টিড

আবারও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

আলভারেজের কারণে বদলে গেল পেনাল্টির নিয়ম

সিরিয়া থেকে এবার ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা