হাসিল আদায় নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ
বগুড়ার সুলতানগঞ্জ হাটে ব্যাপক পশু আমদানী দাম সহনীয় থাকায় কেনাবেচাও বেশি

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : পবিত্র ঈদ উল আযহার আর মাত্র ৪ দিন বাকি। শেষ মুহুর্তে এসে বগুড়ার শাজাহানপুরে জমে উঠেছে কোরবানীর পশুর হাট। আজ সোমবার (২ জুন) বগুড়ার অন্যতম কোরবানির পশুর হাট সুলতানগঞ্জে পশুর আমদানী ছিল প্রচুর। গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানীর পশুর দাম কিছুটা কম থাকায় বেচাকেনাও হয়েছে বেশি।
সকাল থেকেই হাটে আসতে থাকে কোরবানীযোগ্য গরু, ছাগল, ভেড়া। এমনকি রোবাবার দিবাগত রাতেই আশপাশের হাটে পাইকারদের অবিক্রিত গরু ছাগলগুলো সুলতানগঞ্জ হাটে এসে পৌঁছায়। দুপুর পর্যন্ত আসতে থাকে নানা ধরণের পশু। বিকাল থেকে শুরু হয় বেচাকেনা।
পশু কেনাবেচা নিয়ে দিনভর ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দেখা গেছে পশু বেচাকেনার ব্যাপক চাপ। প্রতিবছরের মতো এবারও বড় ষাঁড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি থাকায় তুলনামূলক এসবের দাম একটু বেশি ছিল। তারপরও গত বছরের তুলনায় প্রতিটি পশু শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ কম দামে বেচাকেনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
দেশি জাতের ছোট ও মাঝারি ষাঁড় বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকায়। শাহী ওয়াল, পাকিস্থানী, হলেষ্টাইন ফ্রিজিয়ান ও শংকর জাতের বড় আকারের ষাঁড় বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৬ লাখ টাকায়। অপরদিকে দেশি জাতের ছোট ও মাঝারি খাসি ছাগল ১২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা এবং রাম ছাগল ২২ থেকে ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পশুর হাটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও র্যাবের নজরদারি ছিল। জাল নোট শনাক্তকরণ বুথ এবং ভেটিরিনারী হাসাপতালের অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। সতর্কতামূলক মাইকিংয়ের ব্যবস্থাও ছিল। এ বছর সুলতানগঞ্জ হাটে গরু প্রতি ক্রেতার ১ হাজার ও বিক্রেতার ২শ’ টাকা এবং ছাগল প্রতি ক্রেতার ৫শ’ ও বিক্রেতার ১শ’ টাকা করে হাসিল নেওয়া হয়।
আরও পড়ুনএই হাটটিতে বগুড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে খাস আদায় করা হলেও সরকারের নির্ধারিত মূল্যের দ্বিগুন হাসিল আদায় করা হয়েছে। যদিও খাস আদায়ে অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের নিয়ম নাই। সরকার নির্ধারিত হাসিলের চেয়ে বেশি আদায় করায় ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বগুড়া শহরের আজাহার আলী নামের এক ব্যক্তি আজ সোমবার (২ জুন) সুলতানগঞ্জ হাট থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় একটি দেশী ষাঁড় কিনেছেন। পশুর দাম ক্রেতাদের নাগালে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, পশু রাখার জায়গার অভাব এবং দেখাশোনার ঝামেলা এড়াতে তিনি শেষ মুহুর্তে কোরবানীর পশু কিনলেন। তার মতো শহর ও শহরতলীর আশপাশ এলাকার অনেক ক্রেতাই শেষ পর্যায়ে কোরবানীর পশু কেনার কথা জানিয়েছেন।
বগুড়া শহরের মালতীনগর এম.এস ক্লাব মাঠ সংলগ্ন এলাকার খামারি রবিউল করিম জানান, কোরবানী উপলক্ষে তিনি প্রতিবছর গরু মোটাতাজা করে থাকেন। এবছর হলেষ্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় মোটাতাজা করেছেন। ৫ বছর বয়সী ১৩শ’ কেজি ওজনের ষাঁড়টির নাম রেখেছেন ‘বাহাদুর-২’। আজ সোমবার (২ জুন) সুলতানগঞ্জ হাটে ওই ষাঁড়টির দাম হাঁকা হয় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৭ লাখ টাকা।
রবিউল করিম আরও বলেন, গবাদি পশুর খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় খামারিদের যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, সেতুলনায় পশুর বাজারমূল্য মিলছে না। তাই খামারিদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। ‘বাহাদুর-২’ মোটাতাজা করতে তার ১৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, বর্তমানে প্রতিদিন ১৩শ’ টাকার খাবার দিতে হয়। অথচ তার দাম উঠেছে মাত্র ৭ লাখ টাকা। আজ মঙ্গলবার উপজেলার দুবলাগাড়ী হাট এবং আগামীকাল বুধবার রাণীরহাটে ফের বসবে কুরবানির পশুর হাট।
মন্তব্য করুন