ভিডিও সোমবার, ০২ জুন ২০২৫

রাখাইনে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা

ছবি : সংগৃহিত,রাখাইনে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গেল ৮ বছরে নানা উদ্যোগ নিয়েও আলোর মুখ দেখেনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। তবে সেটি সফল না হলেও বিচ্ছিন্নভাবে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন করছে জাতিসংঘ। এ পর্যন্ত ১১ টি দেশে পুনর্বাসন করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা। কিন্তু এ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ রোহিঙ্গারা।

আর তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন।


সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। যার মধ্যে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ৫ হাজার ৫২০ জন। পরিবার রয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ২৭৪টি। আশ্রিতদের মধ্যে ৫২ শতাংশ শিশু, ৪৪ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক এবং ৪ শতাংশ বয়স্ক রয়েছে। যার মধ্যে ৪৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ শতাংশ নারী। আর প্রতিবছর ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করে।


তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৭-৭৮ সালে ২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে, যার মধ্যে ১ লাখ ৯০ হাজার মিয়ানমারে ফিরে যায়। এরপর ১৯৯১ সালে ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন অনুপ্রবেশ করে, যার মধ্যে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন মিয়ানমারে ফিরে যায়। ২০১২ থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। তারপর ২০১৭ সালে ৮ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। আর ২০২৪-২৫ সালে ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে।


কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে বসবাস করছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাদের নিজদেশে ফেরত পাঠানোর একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছিলো সরকার। কিন্তু দীর্ঘ ৮ বছরেও প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি। তবে মিয়ানমার বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিলো জাতিসংঘ। ইউএনএইচসিআর’র মধ্যস্থতায় এ প্রক্রিয়ায় ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১টি দেশে পুনর্বাসন করা হয় মাত্র ৫ হাজারের মতো রোহিঙ্গা। কিন্তু নাগরিকত্বের অধিকার এবং মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত এসব মানুষকে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন নিরাপদ সমাধান হলেও এই প্রক্রিয়া বন্ধের দাবী তুলেছে খোদ রোহিঙ্গারা। তারা বলছেন, তৃতীয় দেশে পুনবার্সন নয়; নিজদেশে ফিরতে চান তারা।


সরেজমিন উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্প ঘুরে কথা হয় বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে। যাদের সঙ্গে কথা হয় তাদের অনেকেই মিয়ানমারে পড়াশোনা করেছেন। এখন ক্যাম্পে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন।


রোহিঙ্গা নারী শাহনাজ বিবি জানান, আমরা দুর্দশাগ্রস্ত জাতি। আমাদের মাথার ওপর কোন ছায়া নাই, যার কারণে শত বছর ধরে নিপীড়নের মধ্যে আছি। আমাদের শেষ ভরসা শিক্ষিত রোহিঙ্গারা। তারা আওয়াজ তুললে বিশ্ববাসী শুনবে। কিন্তু তারাও পুর্নবাসনের নামে বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। ফলে আমাদের অধিকার আদায়ের মানুষ আর থাকছে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে নিজের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আশা পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।


মোহাম্মদ সাদেক ও মোহাম্মদ হুমায়ুন বলেন, প্রায় ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে। সেখান থেকে ৮ বছরে নেয়া হয়েছে অল্পকিছু রোহিঙ্গা। যাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের অধিকাংশই শিক্ষিত। ফলে শিক্ষিত নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যাচ্ছে।


আরেক রোহিঙ্গা রিয়াজ বলেন, ‘অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে দেশে ফিরতে চাই। তৃতীয় কোনো দেশে যেতে চাই না। বিদেশ গিয়ে থাকব, তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন হব এটাতে তো আমাদের স্বাধীনতা আসবে না। এটা তো দাসত্ব জীবনের ২য় ঢেউ হবে।’

আরও পড়ুন

রোহিঙ্গা তরুণ আরফাজ কামাল বলেন, ‘এক্ষুনি নিজদেশে চলে যেতে চাই। কারণ ওখানে তো ঘরবাড়ি আছে। শরণার্থী হয়ে থাকতে আসেনি, জীবন বাচাতে এসেছিলাম। এক্ষুনি নিজদেশে চলে যেতে চাই। আমি নিজদেশে যাব, আমি কেন তৃতীয় দেশে যাব? ওঠা তো আমার দেশ না। আমি কেন লন্ডন, আমেরিকা যাব?’


রোহিঙ্গাদের দাবি, শিক্ষিত নেতৃত্ব শূন্য হয়ে প্রত্যাবাসন অনিশ্চয়তায় পড়ে যাচ্ছে। শিক্ষিত নেতৃত্ব ছাড়া নিজদেশে ফেরত যাওয়ার আওয়াজ তোলা সম্ভব নয়। এখন বেশি জরুরি নিজের দেশ মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা দরকার।


লম্বাশিয়া ক্যাম্প-১ এর বাসিন্দা ছিদ্দিক আলী বলেন,‘টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ, বিদেশ নিয়ে যাওয়া এটা আমাদের পছন্দ হচ্ছে না। আমাদের দেশে আমরা কিভাবে যেতে পারব কারণ সেখানে মা-বাবা রেখে এসেছি। আমরা শুধুমাত্র নাগরিকত্ব নিয়ে নিরাপত্তার মাধ্যমে নিজদেশ মিয়ানমারে অন্যান্য নাগরিকদের মতো থাকতে পারলে এখন চলে যাব।’


আরেক রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘ক্যাম্পে ত্রাণ দিচ্ছে এটাতে মন শান্তি হচ্ছে না। কারণ মা-বাবা, ভাই-বোনদের কবর জিয়ারত করতে পারছি না। যেকোনভাবে আমাদেরকে মিয়ানমার পাঠিয়ে দিলে মনে শান্তি পাব।’


একই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ নুর বলেন, ‘ক্যাম্পে ৫ মিনিটও থাকতে ইচ্ছে করছে না। আমাদের দেশে আমরা গিয়ে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারি সেটা বিশ্ববাসীকে দেখা চাই। বিদেশ যাওয়া এটা পছন্দ করি না। কোথাও না, নিজদেশে ফিরতে চাই।’

এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হেলাল উদ্দিন বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পে বসবাস করছে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গারা। সেখান থেকে ৮ বছরে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন হয়েছে মাত্র ৫ হাজারের মতো। তার বিপরীতে ক্যাম্পে জন্ম নিয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার নতুন শিশু। সুতরাং রোহিঙ্গাদের নিজদেশে প্রত্যাবাসন ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। তাই দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করলে স্থানীয়দের নানাবিধ সংকট থেকে মুক্তি পাবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই প্রক্রিয়ায় প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে তৃতীয় দেশে চলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া নিজদেশে যাওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে।


এদিকে সম্প্রতি মিয়ানমারের জান্তা সরকার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হলেও তার বিপরীতে রাখাইন থেকে পালিয়ে এসে নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঈদে ফিরছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নতুন রূপে

বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় সহযোগিতা করবে চীন

সমাবেশে নারীকে লাথি মারা সেই জামায়াতকর্মী গ্রেফতার

হোয়াইট ওয়াশ এড়াতে পাকিস্তানকে ১৯৭ রানের সহজ লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ

ইশরাকের শপথ সংক্রান্ত আদেশের কপি পেল ইসি

দুগ্ধজাত খাবার পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি দৈহিক ও মানসিক বিকাশ করে- ডিসি হোসনা আফরোজা