ভিডিও বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

‘ভূমিকম্প হলে কুইক রেসপন্স করবে স্পেশাল ফোর্স’

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)-এর সদস্যদের নিয়ে অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠা

ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অপারেশনাল বিভাগকে মিরপুরে স্থানান্তরের কথা জানিয়েছেন সেবামূলক এই সংস্থার মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল।

 

আজ বুধবার (১৪ মে) ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)-এর সদস্যদের নিয়ে অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সংস্থাটির মহাপরিচালক।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ঢাকায় ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগ মুহূর্তে উদ্ধার সহায়তার জন্য কুইক রেসপন্স করতে ৬০ সদস্যের স্পেশাল ফোর্স তৈরি করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ২০ জনের একটি করে স্পেশাল টিম তৈরিরও কাজ চলছে।

কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক বলেন, ভূমিকম্প হলে আমরাও (ফায়ার সার্ভিস) আক্রান্ত হতে পারি। কিন্তু উদ্ধার কাজে নিয়োজিত অপারেশনাল টিমকে আক্রান্ত হতে দেওয়া যাবে না। তাহলে উদ্ধার কাজ করবে কে? তাই আমাদের কমান্ডিং ফোর্সকে আলাদা করা হচ্ছে। ডিরেক্টর ট্রেনিং ও ডেভেলপমেন্টকে আমরা পূর্বাচলে নিচ্ছি। সেখান থেকে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারব।

তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে বাছাইকৃত ফাইটারদের নিয়ে ৬০ জনের একটি স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে পূর্বাচলে রেখেছি। বড় ভূমিকম্পেও আশা করি সেখানে কোনো ক্ষতি হবে না। আমাদের স্পেশাল টিম রেডি থাকবে মূলত বড় ধরনের আগুন, ভূমিকম্প দুর্যোগে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে। তখন গ্যাস থেকে বিস্ফোরণও ঘটতে পারে। তখন যেন এই টিমের সদস্যরা দ্রুত রেসপন্স করতে পারে। ইতোমধ্যে তাদের ট্রেনিং সম্পন্ন হয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি বিভাগীয় শহরে ২০ জনের একটি করে স্পেশাল টিম থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, যদি চট্টগ্রামে ভূমিকম্প হয়, তাহলে ওই টিম যেন দ্রুত মুভ ও রেসপন্স করতে পারে। সঙ্গে ঢাকার ৬০ জনের স্পেশাল টিমকে পাঠানো যাবে। যদিও এসব পর্যাপ্ত নয়। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে।

তিনি বলেন, ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরের যে জনসংখ্যা, সে তুলনায় ফায়ার সার্ভিসের জনবল, ইকুইপমেন্ট বা স্টেশন সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। ঢাকা শহরে যদি ভূমিকম্প হয়, দুর্যোগ তৈরি হয়, তা মোকাবেলায় জনবল, ইকুইপমেন্ট বা স্টেশন সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। কারণ ভূমিকম্প হলে আমরা তো নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হব।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ভবনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ভবনও কিন্তু ভূমিকম্প থেকে ঝুঁকিমুক্ত নয়। যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমরাও আক্রান্ত হতে পারি। তাই সবাই মিলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, বিশেষ করে ভূমিকম্পের মতো দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজের কোনো বিকল্প নেই।

প্রান্তিক পর্যায়ে ফায়ার সেফটি বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে অগ্নি ও দুর্যোগ সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে ফায়ার সেফটি সচেতনতার বিষয়টি এ বছর সংযুক্ত করা যায়নি। তবে আমরা আশা করব, আগামী বছরে পাঠ্যপুস্তকে সংযুক্ত হবে। আমরা প্রস্তাবনাসহ বিস্তারিত সব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।

আরও পড়ুন

মহাপরিচালক বলেন, ঢাকায় ১৮ থেকে ২০টি স্টেশন আছে। ঢাকায় যদি ভূমিকম্প হয়, তবে এর মধ্যে ৮ থেকে ১০টি স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাকি স্টেশনগুলো তখন স্পেশাল ফোর্সের সঙ্গে সহায়তা করবে। ঢাকায় যদি ভূমিকম্প হয়, তা যে সারাদেশে একই মাত্রায় হবে এমন মনে করি না।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। অগ্নি, ভূমিকম্প, দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় মানবপ্রাণ রক্ষাসহ সম্পদ উদ্ধারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মাধ্যমেই ফায়ার সার্ভিস সেবা দিয়ে থাকে। ফায়ার সার্ভিসের একজন ফায়ার ফাইটার থেকে শুরু করে মহাপরিচালক পর্যন্ত সবারই সীমাবদ্ধতা থাকে। তবে চেষ্টার কোনো কমতি নেই। গণমাধ্যম ফায়ার সার্ভিসের কাজগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরে, প্রচার করে বলেই ফায়ার সার্ভিস সম্পর্কে মানুষের আস্থা তৈরি হয়েছে।

মায়ানমারে ভূমিকম্পের পর উদ্ধার কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সবাই ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে পেশাদারত্ব ও দক্ষতার জন্য। আমরা এক মাসব্যাপী ঢাকার ৩৫টি স্থানে অগ্নিনির্বাপণ, অগ্নিনিরাপত্তা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। বড় আগুনের ঘটনাও আমরা মোকাবিলা করেছি। সেখানে অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের ভূমিকা, সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হবে, সেটা প্রদর্শন করা হয়েছে। আমরা ফায়ার সার্ভিসের ফেসবুক পেজে নিয়মিতভাবে সচেতনতামূলক পোস্ট করছি, ভিডিও প্রচার করছি, যাতে করে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

ফায়ার সার্ভিসের কাজ করতে গিয়ে ভুল হতে পারে, সেটা আমরা সংশোধন করব, কিন্তু আমরা সজ্ঞানে কোনো দুর্নীতি বা নিয়োগ বাণিজ্যে জড়াব না। আগুন বা দুর্যোগে মানুষ পালায়, সেখানে আমাদের ফাইটাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন।

এ সময় ফায়ার সার্ভিসের ভালো কাজগুলো প্রচার করে পাশে থাকার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ক্র্যাব সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল বলেন- অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্পসহ যেকোনো দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা ঢাকা শহরে প্রায়দিনই আমরা আগুনের মুখোমুখি হই। যেকোনো বড় দুর্যোগ মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিস অংশগ্রহণ করে। তবে শুধু তাদের ভরসায় না থেকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। ফায়ার সেফটি সচেতনতার বিষয়টি শিখনপাঠনের জন্য পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলে ছোটবেলা থেকেই সচেতনতা বাড়বে। নাগরিকরা প্রত্যেকে হয়ে উঠতে পারে ফাইটার।

পাশাপাশি অগ্নি ও ভূমিকম্প দুর্যোগে নিরাপত্তা, সেফটি পরিকল্পনা ও সচেতনতায় সাংবাদিকদের নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও কার্যকর কর্মশালা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

কর্মশালায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশা, প্রশিক্ষণ সম্পাদক জসীম উদ্দীনসহ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যগণ, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এম এ আজাদ আনোয়ার ও মিডিয়া সেলের সিনিয়র স্টাফ অফিসার মো. শাহজাহান শিকদারসহ অন্য কর্মকর্তারা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ায় ‘খামারী’ মোবাইল অ্যাপ ও ক্রপ জোনিং সিস্টেম বিষয়ক কর্মশালা

পাবনার চাটমোহরে অটোরিকশার ধাক্কায় এক ব্যক্তি নিহত

সিরাজগঞ্জে কচু চাষে-খরচ কম, লাভ বেশি

রাজশাহীতে আমবাগান থেকে ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার

৬ ঘণ্টা পর শাহবাগ ছেড়েছেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা, যানচলাচল স্বাভাবিক

বগুড়ার ধুনটে অব্যবহৃত সরকারি পাঠ্যবই বিক্রি : গ্রেফতার ২