বৃষ্টি হলেই কেবল তাপমাত্রা সহনীয় হতে পারে
মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহে পুড়ছে বগুড়াসহ সারাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার : এবছরের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহে বগুড়াসহ এই অঞ্চলের মানুষ ও প্রাণিকূলের অবস্থা ত্রাহী ত্রাহী। আজ শুক্রবার (৯ মে) পুড়ছে দেশের বেশিরভাগ এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন মাত্রার তাপদাহ। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রী। বগুড়াতেও মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই অস্বস্তিকর অবস্থা চলবে আরও দু একদিন। বৃষ্টি হলেই কেবল তাপমাত্রা সহনীয় হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।
গ্রীষ্মে গরম পড়বে এটাই স্বাভাবিক। এজন্য এপ্রিল মাসকে দেশের উষ্ণতম মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু এবার ততটা উষ্ণ ছিল না এ মাস। মাঝে মাঝে তাপমাত্রা বাড়লেও আবার আবহাওয়া সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। এ মাসের গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
এরপর উষ্ণতম মাস ধরা হয় মে মাসকে। এমাসের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রী পর্যন্ত। এবছরের চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহেও তাপমাত্রা সহনীয় ছিল। কিন্তু গত বুধবার থেকে তাপমাত্রার পারদ চড়তে শুরু করে। আজ শুক্রবার (৯ মে) তা তীব্র তাপপ্রবাহে পরিণত হয়। এরইমধ্যে আজ শুক্রবার (৯ মে) দেশের ৪৫ জেলায় ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আজ শুক্রবার (৯ মে) ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই সূর্য অগ্নিবর্ষণ করা শুরু করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা যেন আরও বাড়তে তাকে। সূর্যের এই অগ্নিবর্ষণ চলে বেলা ডোবার আগ পর্যন্ত। এদিকে আজ শুক্রবার (৯ মে) ছিল সরকারি ছুটির দিন। শহরে যানবাহন ছিল কম। সেইসাথে মানুষের উপস্থিতিও কম ছিল। এই উত্তপ্ত আবহাওয়ার মধ্যে যারা একান্ত প্রয়োজনে বের হয়েছিলেন তাদের হাঁসফাঁস অবস্থা। দর দর করে ঘামছিলেন প্রত্যেকে।
বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের সামনে আম গাছের নীচে ব্যাটারি চালিত অটো রিকশায় হুডের নিচে গা এলিয়ে দিয়ে বসে ঝিমুচ্ছিলেন ষাটোর্ধ বিল্লাল হোসেন। বললেন, এমন দিনে রিকশা চালানো খুব কষ্টের। একটা করে ভাড়া মেরে গা ঠান্ডা করতে হচ্ছে। বিকেল তিনটা পর্যন্ত ভাড়া পেয়েছেন মাত্র ২০০ টাকা। বাড়ির জন্য চাল-ডালসহ অন্য খরচ কেমন করে করবে দু:চিন্তা তার চোখে মুখে।
আরও পড়ুনবগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন গোবিন্দগঞ্জের হানুফা বেগম। ছেলে হানিফ মায়ের জন্য ওষুধ ও রোগির পথ্য হিসেবে ডাব নিতে এসেছেন। গরমে গায়ের শার্ট একরকম ভিজে গেছে। বললেন, হাসপাতাল থেকেই ঘামছেন। রোদের তাপে গা জলে যাচ্ছে। এক মিনিটও দাঁড়ানো যাচ্ছে না। ছুটির দিন দোকানপাট বন্ধ। অতিরিক্ত তাপের কারণে ডাবের দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। সবচেয়ে ছোট ডাবটির দাম ১৫০ টাকা। বড়টার তো কথায় নেই।
দেশের বেশিরভাগ এলাকার তাপমাত্রা বিরাজ করছে ৩৬ ডিগ্রীর ওপরে। এতে এই অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু ও মাঝারী তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ সম্পর্কে আবহাওযাবিদরা জানান, ’তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস সূত্র জানান, এই সময় যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অস্বাভাবিক কিছু না। বৃষ্টি না হওয়ায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। আজ শুক্রবার (৯ মে) বগুড়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ। এ অবস্থা আরও দুই দিন থাকতে পারে। আসলে বৃষ্টি না হলে এই তাপপ্রবাহ কমার কোন সম্ভাবনা নেই।
মন্তব্য করুন