ভিডিও বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫

পাবনার বেড়ায় যমুনায় তীব্র ভাঙন আতঙ্কিত পাঁচ গ্রামের মানুষ

পাবনার বেড়ায় যমুনায় তীব্র ভাঙন আতঙ্কিত পাঁচ গ্রামের মানুষ। ছবি : দৈনিক করতোয়া

বেড়া, (পাবনা) প্রতিনিধি : ‘সাত-আট মাস আগেও আমার বাড়ির থ্যা যমুনা নদী প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিল। এখন একেবারে বাড়ি আর দোকানের কাছে আইস্যা পড়িছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভাঙন রোধে আস্তে-ধীরে ও দায়সারাভাবে বস্তা ফালাচ্ছে তাতে ভাঙন থামতেছে না। ভাঙন যেভাবে আমার বাড়ি আর দোকান ছুঁইয়্যা ফালাইছে তাতে আর দুই-তিন দিন এগুলা টিকবে কিনা সন্দেহ। ভয়ে আমাগরে ঘুম, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়া গেছে।’

চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বেড়া উপজেলার নেওলাইপাড়া গ্রামের মুদি দোকানি মঈনউদ্দিন। বাড়ির সামনেই তার দোকান। এই দোকানের আয়েই চলে তার সংসার। কিন্তু যমুনা নদী ভাঙতে ভাঙতে যেভাবে তার বাড়ির পাশে এসে পড়েছে তাতে ভাঙন না ঠেকলে দুই-তিন দিনের মধ্যেই দোকানসহ পুরো বাড়ি নদীতে চলে যাবে। তবে শুধু তার বাড়িই নয়, নেওলাইপাড়া, মরিচাপাড়া ও নতুন বাটিয়াখরা গ্রামের অসংখ্য বাড়িঘর নদীতে বিলীন হতে বসেছে। এর সাথে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে শতবর্ষী কবরস্থান, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় লোকজন জানান, বর্ষা আসতে এখনও দেড় থেকে দু’মাস বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে যমুনার ভাঙন তাদেরকে চরম দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। গত বছর থেকেই যমুনার কয়েকটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়। মাসখানেক আগে থেকে এই ভাঙনের তীব্রতা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়।

এর মধ্যে নেওলাইপাড়া ও নতুন বাটিয়াখড়া গ্রামের ৫০০ মিটার অংশে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি বলে গ্রামবাসী ও পাউবো কর্তৃপক্ষ জানান। এছাড়া মাছখালি, রাকশা ও মরিচাপাড়া গ্রামেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই-তিন মাসে এই এলাকার অন্তত পাঁচশ’ বিঘা কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন একেবারে গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ বাড়িঘরের কাছে এসে পড়েছে। এতে পাকাবাড়ি, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অসংখ্য স্থাপনা নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে এলাকাবাসী জানান, দুই সপ্তাহ ধরে পাউবো ভাঙনরোধে ‘জরুরি’ কাজের নাম করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ নেওলাইপাড়ার যমুনাপাড়ে বালুভর্তি জিও-বস্তা ফেলতে শুরু করেছে। কিন্তু নামে ‘জরুরি’ হলেও এই কাজে নেই কোনো গতি। অল্প কিছু বস্তা ফেলে দুই-একদিন করে বিরতি দেওয়া হচ্ছে। এতে ভাঙন তো কমছেই না বরং ভাঙনরোধের কাজ চলার সময় শুধু নেওলাইপাড়া অংশেরই অন্তত ১৫ বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

ধীরগতির কাজের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও কাজের গতি তেমন বাড়ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। মরিচাপাড়া গ্রামের আজিমউদ্দিন, ইদ্রিস আলী, শাহাদত হোসেন, নেওলাইপাড়ার ইশতিয়াক হোসেনসহ বেশ কয়েকজন এলাকাবাসীর সাথে কথা হয় ভাঙনকবলিত পাড়ে দাঁড়িয়ে। তারা দূরে হাত দিয়ে যমুনা নদীতে নির্দিষ্ট করে দেখিয়ে জানান, এক বছর আগেও যমুনা এক কিলোমিটার দূরে ছিল।

আরও পড়ুন

এই এক কিলোমিটার অংশে ছিল শত শত বিঘা ফসলি জমি। তারা জমি রক্ষায় ভাঙন ঠেকাতে মানববন্ধন, দোয়া অনুষ্ঠান, প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। বিভিন্ন দপ্তরে বহু আবেদন করেছেন। কিন্তু ভাঙনরোধে তখন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সময়মতো উদ্যোগ নেওয়া হলে শত শত বিঘা ফসলি জমি রক্ষা পেত। আর এখন নদী আরও আগ্রাসী রূপ নিয়ে ঘরবাড়ি, কবরস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, পাকারাস্তা ছুঁয়ে ফেলেছে। দুই সপ্তাহ ধরে পাউবো ভাঙনরোধে কাজ শুরু করলেও তা হচ্ছে একেবারেই ধীরগতিতে। ফলে নদী ভেঙেই চলেছে। তাই আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।

নেওলাইপাড়া গ্রামের বাবু সরদার বলেন, কয়েকদিন আগে আমার দুই বিঘা উর্বর ফসলি জমি নদীতে গেছে। এখন বাড়িঘর নদীতে চইল্যা যাওয়ার উপক্রম হইছে। বাড়িঘর গাঙে গেলি কনে যাব?’ এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বেড়া উপজেলায় যমুনার কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নেওলাইপাড়াতে আমরা সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে ভাঙনরোধে কাজ শুরু করেছি। জিও-ব্যাগ পেতে সমস্যা হওয়ায় মাঝে কাজে কিছুটা ধীরগতির হয়েছিল। এছাড়া ঠিকাদার নিয়েও কিছুটা সমস্যা হয়েছিল।

এখন আর কোনো ধরনের সমস্যা নেই। দ্রুতগতিতে ভাঙনরোধে কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই ভাঙন অনেকটা থেমে গেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওই এলাকার কাজ শেষ হবে এবং ভাঙনও পুরোপুরি বন্ধ হবে বলে আশা করছি। আর  নেওলাইপাড়ার কাছে অন্য এলাকার ভাঙনরোধেও আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাকিস্তানে ১৩টি ইসরায়েলি ড্রোন দিয়ে হামলা, ১২টিই ভূপাতিত

মুন্সিগঞ্জের বাস চাপায় অ্যাম্বুলেন্সের পাঁচ যাত্রী নিহত

নিখোঁজ ক্রিকেটার রুবেলের ভাতিজা 

প্রেম করছেন প্রসেনজিতের মেয়ে, ‘খুব মিষ্টি’ মন্তব্য ফুপুর

মিয়ানমারে পাচারকালে ৭৪২ বস্তা ইউরিয়া সারসহ আটক ১১ 

ভারতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৬