ভিডিও শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

খরস্রোতা পুনর্ভবা নদী এখন খেলার মাঠ

সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি : বৈশাখ পেরিয়ে জ্যৈষ্ঠ আসন্নপ্রায় হলেও নওগাঁর সাপাহার উপজেলার সীমান্তবর্তী এক কালের খরস্রোতা পুনর্ভবা নদী এখন মরা খাল ও ছেলেদের দৌড়ঝাপ এবং খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে ওই সীমান্ত এলাকার ছেলেরা নদীগর্ভে নেমে পানিশূণ্য শুকনো নদীতে বালির চরে দৌড়ঝাপ, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলছে। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে নদী দেখতে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেছে।

পুনর্ভবা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী এটি বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের দিনাজপুর জেলা এবং পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২২৩ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ ১০২ মিটার, পুনর্ভবা নদীর প্রাচীন উৎস ব্রম্মনপুর বরেন্দ্র ভূূমি।

অতিতে নদীটি তীব্র খরস্রোতা ও প্রায় সারাবছর নদীতে পানি প্রবাহমান ছিল তখনকার দিনে নদী পাড়ের মানুষ ওই নদীর পানি দিয়ে মাঠে হরেক রকম ফসল ফলাদি উৎপাদন করত এবং চৈত্র বৈশাখ মাসে নদীর পানি কমে যাওয়ায় প্রতিবছর সীমান্ত এলাকার মানুষ ওই নদী হতে বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক মাছ শিকার করে থাকতো। কালের বিবর্তনে সব কিছুই হারিয়ে গিয়ে বর্তমানে নদীটি দেখলে মনেই হবেনা যে এটি একটি খরস্রোতা নদী মনে হয় যেন বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের একটি খাল বা ক্যানেল।

সীমান্তবর্তী নদী এলাকার সাপাহার উপজেলার উত্তর পাতাড়ী গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মতিউর রহমান, আব্দুল খালেক বিশ্বাস ও আব্দুল্লাহ জানান যে, পাকিস্থান শাসনামলে কিংবা তারও পূর্ববর্তী সময়ে নদীটি সারাবছর প্রবহমান থাকতো দেশের রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন না থাকায় সারা বছর এই নদীর বুক চিরে নৌকা যোগে মানুষ বিভিন্ন হাটে গঞ্জে গিয়ে তাদের উৎপাদিত পণ্যসামাগ্রী বিক্রি করে হাটবাজার করত, এমনকি মাঝে মধেই বাহারী বিয়ের নৌকার বহর ও চোখে পড়তো এই নদীতে।

ভারত বাংলা বিভক্তের সময় ইন্দ্রা, মুজিব চুক্তি মোতাবেক এই নদীটি উভয় দেশের আন্তঃসীমানা চুক্তি হয়েছে বলে অনেকেই জানিয়েছেন। সে চুক্তি মোতাবেক নাকি নদীর মাঝখানে উভয় দেশের সীমানা, যখন যে অঞ্চল যে দিকে ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হবে তখন সে অঞ্চল সে দেশের ভূূখন্ড বলে বিবেচিত হবে এবং নদীর মাঝখানে সীমান্ত পিলার বলে ধরা হবে।

আরও পড়ুন

পুনর্ভবা নদীটি উজানে ভারত থেকে নেমে এসে সাপাহার উপজেলার উত্তর পাতাড়ী গ্রামের কাবলীরঘাটে নেমে বাংলাদেশের আন্তঃসীমানা নদী হয়ে কলমুডাঙ্গা, পোরশার নিতপুর চাপাই নবাবগঞ্জের রোকনপুর হয়ে মহানন্দা নদীর মোহনায় মিলত হয়ে পদ্মা নদীতে পড়েছে।

এককালের খরস্রোতা এই নদীটি এখন তার অতীত যৌবন, ঐতিহ্য, সৌন্দর্য্য, গৌরব সব হারিয়ে এখন মরা খাল ও ছেলে মেয়েদের খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি, ভবিষ্যত প্রজন্ম ও শিক্ষিত সমাজের সকল স্তরের মানুষের ধারণা ও দাবি নদীটি সরকারিভাবে নদী শাসন ও ড্রেজিং বা খনন করা হলে নদীটি আবারো তার পুনঃযৌবন ফিরে পেত এবং সারা বছর ধরে প্রবাহমান থাকায় নদীর পাড়ের লোকজন ও হাজার হাজার হেক্টর জমিতে নদীর পানিতে সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করত পারতো।

তাই সাপাহারবাসী নদীটিকে নতুন করে নদী শাসনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক আয়ের উৎস ও এলাকাবাসীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন। 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় বাসের ধাক্কায় ভ্যান চালক নিহত

মানুষের ঘরে ঘরে তারেক রহমানের ৩১ দফার বার্তা পৌঁছে দিতে চাই - সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন

বগুড়ার সোনাতলায় বৃষ্টিতে ১শ’ হেক্টর জমির আউশ ধান তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে

জয়পুরহাটের বাগজানা সীমান্ত দিয়ে বিজিবির সহায়তায় ভারতে ফিরে গেল খাদিজা

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় ৪৫ টি মন্ডপে মৃৎ শিল্পীরা দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত

কোরআনের আইন চালু করতে সোনাতলা সারিয়াকান্দির মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে : অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন