বগুড়ায় নিখোঁজ ঢাবি’র সাবেক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার, কেন এই হত্যাকান্ড? রহস্য ঘনীভূত
স্টাফ রিপোর্টার : তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হাসিন রায়হান সৌমিকের (২৮) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার (২৯ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বি-ব্লক বোট ক্লাবের লেকে ভেসে থাকা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সৌমিক বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বোচারপুকুর গ্রামের তৌফিকুর রহমানের ছেলে।
তবে তিনি তার পরিবারের সাথে শহরের জলেশ্বরীতলা নূর মসজিদ এলাকায় বসবাস করতেন। সৌমিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এদিকে, জলেশ্বরীতলায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এসি’র পানি খালার বাড়ির ব্যালকুনিতে পড়ার প্রতিবাদ করায় কাল হয়েছে সৌমিকের।
কয়েকদিন আগে এ নিয়ে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও তার লোকজন সৌমিকের খালাকে মারপিট করেন। পরে সৌমিক এর প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনার জের ধরেই সৌমিককে হত্যা করা হয় বলে তার মা দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গতরাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সৌমিক হত্যার ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়নি।
অপরদিকে, কেন এই হত্যাকান্ড? ঘাতক কারা? এ হত্যার রহস্য কী, তা জানতে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সিসিটিভি’র ফুটেজ, ঢাকাগামী বাসের টিকিটসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব আলামতের সূত্র ধরে হত্যাকান্ডে কারা জড়িত তা বের করতে এবং হত্যার রহস্য উন্মোচনে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।
গত ২৬ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সৌমিক বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলার বাসা থেকে হাঁটতে বের হন। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ হন এবং তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন ২৭ জুন শুক্রবার সকালে এ ব্যাপারে সৌমিকের বাবা তৌফিকুর রহমান বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
সৌমিকের বাবা তৌফিকুর রহমান কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, বগুড়া সদর থানায় জিডি করার পর থেকে যদি পুলিশ চেষ্টা করতো তাহলে হয়তো তার ছেলে বেঁচে যেত। তবে পুলিশ কাজ শুরু করেছে দেরিতে। সৌমিকের বাবা আরও বলেন, তার ধারণা, পরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক ও মিডিয়া) আতোয়ার রহমান বলেন, সৌমিক নিখোঁজের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ কোন অবহেলা করেনি। জিডি করার পর প্রথম থেকে তদন্ত শুরু করেছে। তিনি জানান, শহরের জলেশ্বরীতলা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, গত ২৬ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ টা ৪৪ মিনিটে সৌমিক জলেশ্বরীতলা নূর মসজিদ এলাকার বাড়ি থেকে কালীবাড়ির দিকে একা হেঁটে যাচ্ছেন।
জানা যায়, প্রতিদিনই তিনি সন্ধ্যায় হেঁটে থাকেন। সঙ্গে তার মাও থাকেন। কিন্তু সেদিন তার সঙ্গে মা ছিলেন না। এরপর গত ২৮ জুন শনিবার তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ জানতে পারে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। ওই দিন বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সৌমিক ঢাকায় বসুন্ধরা এলাকায় তার বন্ধুর সাথে অবস্থান করেন। কিন্তু পরে তিনি বগুড়ায় আসেন।
তিনি বলেন, এরপর গতকাল ২৯ জুন সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুরে বি-ব্লক এলাকায় বোর্ড ক্লাবের লেকে তার ভাসমান লাশ পাওয়া যায়। পরে লেক থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
তিনি বলেন, সৌমিকের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা ও ঘাতকদের শনাক্ত এবং গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। সৌমিক এসআর পরিবহনের একটি বাসে বগুড়া থেকে ঢাকা যান। বগুড়ার শেরপুরে এসআর কাউন্টার থেকে তিনি বাসের টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন।
তিনি ২৭ জুন রাত পৌনে ১২টার বাসের টিকিট সংগ্রহ করেন। পরে ওই বাসেই তিনি ঢাকা যান। সেই টিকিট আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আরও তদন্ত চলছে।
মন্তব্য করুন