নওগাঁয় সারি সারি তালগাছ রোপণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অধ্যক্ষ আরিফ

নওগাঁ প্রতিনিধি : পেশায় তিনি একজন শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধি। ছাত্রগড়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজও সামাল দেন দক্ষ হাতে। তবে এসবের বাইরে তার একটা অন্য পরিচয় আছে, সবুজের ফেরিওয়ালা নামে। গাছ রোপণ করাই তার নেশা। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার তালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫০ হাজারের বেশি গাছ রোপণ করেছেন।
আজ সেই তাল গাছগুলো রাস্তার দু’পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর গাছের ছায়াতলে পথিকরা প্রাণ জুড়ায় এবং বিনোদন প্রেমীরা করে আনন্দ। কেউবা তোলে ছবি। তবে বর্তমান সময়ে স্থানীয়দের দাবি সড়কের পাশে পথিকের বসার জন্য মানসম্মত সিটের ব্যবস্থা। আর এই ভালো কাজটি করে জেলায় বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন নওগাঁর রাইগাঁ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এবং রাইগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান সরদার।
গাছ জনগণের বড় বন্ধু। সেই ভাবনা থেকে ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে আজ অবধি গাছ লাগিয়ে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ আরিফ। দেশের তথা মানুষের কল্যাণে এ ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। পরিবেশ রক্ষা ও নানা কল্যাণমূলক কাজ করে ইতোমধ্যে সবার নজর কেড়েছেন তিনি। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে একটি ভালো কাজ দিয়ে শুরু হয় তার দিন। এভাবেই চলছে তার দীর্ঘসময়। আজ থেকে ৪০ বছর আগে ছাত্রজীবনে নিজ গ্রামের কয়েকজন বন্ধু মিলে ইউনিয়নের বহুতি গ্রাম থেকে নিজ গ্রাম শহরাই হয়ে ডাবরকুড়ি পর্যন্ত প্রায় এক হাজার তালগাছ রোপণ করেছিলেন। যা বর্তমানে ‘তালপার্ক’ নামে পরিচিতি। এরপর তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হন। এ সময় তিনি নিজ তহবিল থেকে বিভিন্ন রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানে ফুল, ফল, বনজ, ঔষধিসহ নানা প্রজাতির গাছ রোপণ অব্যাহত রেখেছেন। যে কারণে বৃক্ষপ্রেমিক মানুষটি নিজ এলাকায় ‘সবুজের ফেরিওয়ালা’ নামে পরিচিত হয়েছেন। বদলগাছীর শেষ প্রান্ত থেকে মাতাজীহাট হয়ে নজিপুরের শুরু পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু, জাকারান্ডা, পলাশ, কদম, টগরসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৫০ হাজার গাছ রোপণ করেছেন।
যা বর্তমানে শোভাবর্ধন করছে। এছাড়া রাইগাঁ ইউনিয়নের প্রতিটি সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, খাস জায়গা, কাঁচা-পাকা রাস্তার দুই পাশসহ মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশানঘাট, স্কুল, কলেজ এবং মহাদেবপুর-বদলগাছী দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বৃক্ষরোপণ করেছেন। ইতোমধ্যে তালগাছকে কেন্দ্র করে এলাকার সৌন্দর্য ফুটে ওঠায় পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সড়কটি। বজ্রপাত থেকে রক্ষায় এই তালগাছগুলো ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
আরও পড়ুনঅধ্যক্ষ আরিফ বলেন, তালগাছ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে, এজন্য ছাত্রজীবনে বন্ধুদের নিয়ে তালগাছগুলো রোপণ শুরু করেছিলাম। রাইগাঁ ইউনিয়নের সব রাস্তায় তালবীজ লাগিয়েছি। এছাড়া ইউনিয়নকে সবুজ ও রঙিন করতে দীর্ঘ সময় প্রায় পঞ্চাশ হাজার গাছ লাগিয়েছি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ চলমান রাখতে চাই। আত্মতৃপ্তি থেকে মানুষকে সাহায্য আর প্রকৃতিতে সবুজায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি স্বপ্ন দেখেন একদিন তার রোপণ করা গাছগুলো বিভিন্ন রঙ ধারণ করে নিজ এলাকা আলোকিত করবে। আর সেই রঙের খেলার সৌন্দর্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসবে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, তালগাছ শুধু সৌন্দর্য বর্ধন নয়; বজ্রপাতের মত শক্তিশালী দুর্ঘটনা থেকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গাছ আমাদের পরম বন্ধু। দ্রুত দর্শনার্থীদের বসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। তাই পরিবেশ রক্ষায় সড়কের পাশে সারি সারি তাল গাছ একটি দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন