জনবল সংকটে ধুকছে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি : প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসাস্থল নওগাঁর মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা নিয়ে আসেন ৪০০ থেকে ৪৫০ জন রোগী। কিন্তু চিকিৎসক সংকটে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররাই এখন আগত রোগীদের একমাত্র ভরসা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে যে ৪ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন তাদের দিয়ে কোনো রকমে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে জরুরি ও অন্ত:বিভাগের কাজ। একই সঙ্গে রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট। এ অবস্থায় আশানুরুপ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত শনিবার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বহির্বিভাগে ২৬৬০ জন, জরুরি বিভাগে ৬৩৭ জন ও অন্ত:বিভাগে ১৯৩ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় এত বিপুল পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও আবাসিক কর্মকর্তাসহ রয়েছেন মাত্র ৪ জন। এর মধ্যে ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে পর্যায়ক্রমে জরুরি ও অন্ত:বিভাগের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক সংকটে ছোট ছোট সমস্যাতেও রোগীদের রেফার্ড করা হচ্ছে নওগাঁ কিংবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগে নারী, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের রোগীদের দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ডাক্তার দেখাতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন অনেকে।
উপজেলার গোসাইপুর গ্রাম থেকে হার্ট, ডায়াবেটিস ও বুকের ব্যথার চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন রোগী রবিউল ইসলাম টিপু। তিনি বলেন, হাসপাতালে কোনো ডাক্তার নাই।
কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারেরা দেখে একটা চিরকুটে কিকি লিখে দিল ভাল লাগেনি। তাই দুধের স্বাধ ঘোলে মিটিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। আগামীতে রাজশাহী শহরে গিয়ে ভাল ডাক্তার দেখাব। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী সুনীল কুমার বলেন, এক সময় এ হাসপাতালে অনেক ডাক্তার থাকায় বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু করা হয়েছিল।
ভালমানের চিকিৎসা পাওয়ায় ওই সময় হাসপাতালে রোগীর লেগেই ছিল। এখন খুঁজে ডাক্তার পাওয়া যায় না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের সামান্য দুরে হাসপাতালটির অবস্থান হওয়ায় এর গুরুত্ব অনেক বেশি। মহাসড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য আহতদের এ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাদের পাঠানো হয় নওগাঁ কিংবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে পথেই অনেক সময় রোগী মৃত্যু ঘটে।
এ প্রসঙ্গে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ হাসপাতালে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক আছেন। এদের দিয়ে কোনোভাবে জরুরি ও অন্ত:বিভাগের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরও সংকট রয়েছে। এসব কারণে রোগীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আশা করছি খুব শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।
মন্তব্য করুন