পাবনায় এক কেজি ধানও কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ

শাহীন রহমান, পাবনা : পাবনায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল ধান সংগ্রহ অভিযানের শেষদিন। কিন্তু এক কেজি ধানও কিনতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। ফলে র্ব্যথতা নিয়েই শেষ হয়েছে এ বছরের আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গত ১৭ নভেম্বর ’২৪ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে জেলার নয়টি উপজেলা থেকে ৪ হাজার ৮২৭ মেট্রিক টন ধান ও ৮ হাজার ৪৮২ দশমিক ১৩০ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। চাল সংগ্রহের জন্য ১৭৩টি চালকল মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। একই সঙ্গে গত বছরের তুলনায় তিন টাকা দাম বাড়িয়ে প্রতি কেজি ধানের সরকারি দাম ধরা হয় ৩৩ টাকা এবং প্রতি কেজি চালের দাম ধরা হয় ৪৭ টাকা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অভিযান শুরুর পর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি। তবে চুক্তি থাকায় চালকল মালিকেরা ৫ হাজার ৪৯৯ দশমিক ৯২০ টন চাল সরবরাহ করেছেন। সে অনুযায়ী ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শূন্য শতাংশ ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৬৫ শতাংশ পূর্ণ হয়েছে। এ অবস্থাতেই ২৮ ফেব্রুয়ারি অভিযান শেষ হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আদ্রতা, চিটার কথা বলে প্রতি মণে এক-দুই কেজি করে বেশি ধান নেওয়াসহ অনেক সময় ধান ফেরতও দেওয়া হয় কৃষকদের। স্থানীয় বাজারে এসব ঝক্কি-ঝামেলা নেই। এসব কারণে কৃষকেরা বাজারে ধান বিক্রি করেছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া গ্রামের কৃষক আবু বকর বলেন, ‘গ্রেডিং, শুষ্কতা, পরিবহণ খরচ, মজুরি খরচের হিসাব বিবেচনা করলে বাড়ি থেকে পাইকারের কাছে অথবা পার্শ্ববর্তী বাজারে কাছাকাছি দামে বিক্রি করাই অনেক সুবিধাজনক।’
সাঁথিয়ার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, পাইকারেরা বাড়িতে এসে ধান মেপে কিনে নিয়ে গেছেন। সেইসঙ্গে সাপ্তাহিক হাটেও ধান বিক্রি করেছেন। সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ না করে এ পদ্ধতিতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্যবেবাধ করেন।
আরও পড়ুনআটঘরিয়া উপজলোর কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান দিলে তাদের প্রতি মণ ধানে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত লোকসান যেত। তাই অধিকাংশ পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছেন। ঈশ্বরদীর ধান-চাল ব্যবসায়ী মিজান মহলদার বলেন, বর্তমানে মনপ্রতি ১৪শ’ টাকার বেশিতে ধান বিক্রি হচ্ছে। তারপরও আশানুরূপ ধান মিলছে না পাইকার বাজারগুলোতে।
ঈশ্বরদীর চালকল মালিক ফজলুর রহমান বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ ৫০ টাকার বেশি। প্রথম দিকে লোকসান দিয়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে চাল বিক্রি করলেও এখন সরকার নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি সম্ভব না।
এ বছর তিনি ১৫ টন চাল সরবরাহের চুক্তি করছেন। সংগ্রহ অভিযানের শুরুতেই তিনি বেশিরভাগ চাল সরবরাহ করেছেন জানিয়ে আরও বলেন, প্রায় ২০ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করেছি। পাবনা জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক হাসান আল নাঈম বলেন, সরকার নির্ধারিত ধানের সংগ্রহ মূল্য ও বাজারে ধানের দামের খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় কৃষকরা গুদামে ধান দিতে আগ্রহী হননি।
সরকারের ধান সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পায়। কৃষক যেহেতু বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন, সে কারণে আমাদের সংগ্রহ কম। কৃষকদের ধানের যথাযথ দাম দিতেই সরকার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য সফল হয়েছে বলে দাবি এই র্কমর্কতার।
মন্তব্য করুন