ভিডিও মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

৪শ’ বছরের ঐতিহ্য শাজাহানপুরের খাউড়া মেলাকে ঘিরে উৎসব মুখর পরিবেশ

৪শ’ বছরের ঐতিহ্য শাজাহানপুরের খাউড়া মেলাকে ঘিরে উৎসব মুখর পরিবেশ

শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : শাজাহানপুরে উৎসব মুখর পরিবেশে আজ বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) প্রায় ৪শ’ বছরের ঐতিহ্য খাউড়া মেলা (ছোট সন্ন্যাস মেলা) হয়ে গেল। মেলাকে ঘিরে নাইওরি দিয়ে ভরে উঠেছে উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের জালশুকা, চান্দাই, শেরকোল, চাঁচাইতারা, মাদলা, সুজাবাদ, বোহাইল, মোস্তাইল, দুবলাগাড়ী, চোপীনগর, শাহ্নগর সহ আশপাশ এলাকার প্রতিটি বাড়ি।

শুধু তাই নয়, মেলার আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী গাবতলী উপজেলার নশিপুর, বালুপাড়া, ইটালী, হোরারদিঘী, বাগবাড়ি, কদমতলী এবং ধুনট উপজেলার জয়শিং ও বমগাড়া এলাকায়। বড় বড় মাছ কিনতে বগুড়া শহর থেকেও অনেকেই ভিড় জমায় খাউড়া মেলায়।

জালশুকা হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ হরিপদ জানান, বাপ-দাদার আমল থেকেই সন্যাস পূজাকে ঘিরে প্রায় ৪শ’ বছর ধরে প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে খাউড়া মেলা। কথিত আছে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পোড়াদহে বড় সন্ন্যাসীর পূজা হতো আর শাজাহানপুরের খাউড়া জানের কিনারায় শ্মশান এলাকায় বৃহদাকার বটগাছের নিচে হতো ছোট সন্ন্যাসীর পূজা। আর এ সন্ন্যাস পুজাকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল খাউড়া মেলা।

কালের আবর্তে সন্ন্যাস পূজা বন্ধ হলেও আজও বসছে মেলা। মেলা থেকে কেনা বড় বড় মাছ, গরু ছাগল কিংবা মহিষের গোস্ত, ফাগুনের মিষ্টি বড়ই, হরেক রকমের মিষ্টান্ন দিয়ে চলছে নাইওরি আপ্যায়ন। পল্লী গ্রামের শিশুদের মুখে হাসি ফোটায় হরেক রকম খেলনা, নাগর দোলাসহ নানা রকম রাইডস্। মেলায় মেলে গ্রামীণ নারীদের নানা রকম প্রসাধনী সামগ্রীও।

গ্রামের মানুষের গৃহস্থালির সারা বছরের চাহিদা মেটায় মেলা থেকে কেনা কাঠের আসবাবপত্র, কামার-কুমোড়ের তৈরি বাসন-কোসন, বাঁশ-বেতের ঝাকা-ডালি-কুলাসহ নানাবিধ সামগ্রী। তাই খাউড়া মেলাকে ঘিরে এ এলাকার মানুষের প্রতীক্ষা থাকে অনেক দিনের।

আরও পড়ুন

গাবতলী উপজেলার মহিষাবান গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহান জানান, তিনি প্রতিবছর খাউড়া মেলায় মাছ বিক্রি করতে আসেন। আজ বুধবারের (১৯ ফেব্রুয়ারি) মেলায় ৮-১০ কেজি ওজনের কাতলা ও রুই মাছ ৮শ’ থেকে হাজার টাকা কেজি, একই সাইজের বোয়াল ও আইড় মাছ ১২শ’ থেক দেড় হাজার টাকা কেজি,  ব্লাক কার্প মাছ ৬শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ৩-৪ কেজি ওজনের বিগ হেড, সিলভার কার্প মাছ বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা কেজি দরে।

এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির সামদ্রিক মাছও উঠেছিল মেলায়। গতকালের মেলায় প্রায় ৫শ’ মণ মাছ বেচা কেনা হয়েছে। অপর দিকে গরু ছাগল ও মহিষের গোশত বিক্রি হয়ে প্রায় ১শ’ মণ। গরুর গোশত সাড়ে ৬শ’, মহিষের গোশত ৭ শ’ এবং ছাগলের গোশত হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।  মাছ গোশতের পাশাপাশি মেলায় প্রায় ৫শ’ মণ মিষ্টি বিক্রি হয়েছে।

প্রকার ভেদে প্রতি কেজি মিষ্টি বিক্রি হয়েছে ১শ’ ৮০ থেকে ৬শ’ টাকা পর্যন্ত। প্রতি বছরের মতো এবারও মাছ আকৃতির মিষ্টির চাহিদা ছিল বেশি। ছোট সাইজের মাছ আকৃতির মিষ্টি বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা কেজি দরে। আর বড় আকারের মাছ আকৃতি মিষ্টি বিক্রি হয়েছে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা কেজি দরে। জালশুকা গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি ইয়াছিন আলী মন্ডল ওরফে তোতা মেম্বার জানান, খাউড়া মেলাকে ঘিরে প্রতি বাড়িতে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত করা হয়।

মেলা থেকে মাছ কিনতে জামাইদেরকে দেওয়া হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। মেলার বড় মাছ, গোশত, হরেক রকমের দই-মিষ্টি এবং ফাগুনের মিষ্টি বড়ই ইত্যাদি দিয়েই দূর-দূরান্ত থেকে আসা নাইওরিদের আপ্যায়ন করা হয়। সপ্তাহ ব্যাপী থাকে উৎসবের আমেজ।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অর্থের অভাবে যেন থেমে না যায় স্বপ্ন—শিক্ষার্থীদের পাশে ছাত্রদল নেতা রবিউল আউয়াল

জবিতে বাজেট ও আবাসন ভাতার দাবিতে শিক্ষার্থীদের গেটলক কর্মসূচি

সাবেক এমপি মমতাজ বেগম গ্রেপ্তার

বগুড়ার সোনাতলায় শতাধিক নলকূপ বিকল মেরামতের উদ্যোগ নেই

দিনাজপুরের বিরলে বন খেজুর গাছের সন্ধান

বগুড়ার ধুনট থানায় অভিযোগ দিতে এসে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার