দুপচাঁচিয়া তালোড়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানকে দরখাস্তের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন

দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) প্রতিনিধি : দুপচাঁচিয়া উপজেলা তালোড়া শাহ্ এয়তেবারিয়া কামিল (মাস্টার্স) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জি.এম মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাকে অপসারণের দাবিতে ক্লাস বর্জন করেছে। গতকাল রোববার থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে ক্লাসরুমসহ শিক্ষকদের অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জি.এম মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার বিভিন্ন তহবিল ও অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের বিভিন্ন হয়রানি, অবৈধভাবে মন্ত্রণালয়ের অডিট টিম নিয়ে এসে শিক্ষক কর্মচারিদের কাছ থেকে ওই টিমকে ম্যানেজ করার নামে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ৫ আগস্টের পর থেকে তার বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগে বরখাস্তের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকেন।
গত ১৮ নভেম্বর মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের (এডহক) সভাপতি ও বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) আব্দুল করিম স্বাক্ষরিত দু’টি কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। এরমধ্যে একটি মাদ্রাসায় বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত ও অপরটি ছাত্র-ছাত্রী এলাকাবাসী কর্তৃক লিখিতভাবে বিভিন্ন অপরাধ সংক্রান্ত।
বেসরকারি মাদ্রাসা সমূহের শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীগণের চাকরি শর্তাবলী অনুযায়ী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর বাধ্যকতা থাকলেও অধ্যক্ষ মোস্তাফিজার রহমান কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব প্রদান না করায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোশারফ হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। এদিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের বিরুদ্ধে অসম্মতি জানিয়ে তিনি গত ১ ডিসেম্বর রোববার উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করেছেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত রিট পিটিশনটি গ্রহণ করে অধ্যক্ষের পক্ষে রায় দেন উচ্চ আদালত। রায়ের চিঠি মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) আব্দুল করিমের নিকট প্রদান করা হয়। সভাপতি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমানকে মাদ্রাসায় পুনরায় যোগদানের জন্য পত্র প্রদান করেন।
আরও পড়ুনমাদ্রাসায় অধ্যক্ষের যোগদানের খবর পেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ফুসে উঠে এবং আবারও আন্দোলন শুরু করে। তারা অধ্যক্ষকে দুর্নীতিবাজ, অনৈতিক চরিত্রের অধিকারী উল্লেখ করে তার বহিস্কারের দাবিতে মাদ্রাসার সকল শ্রেণি কক্ষসহ অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
গতকাল সোমবার উপাধ্যক্ষ মোশাররফ হোসাইন জানান, গত রোববার থেকে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষর বরখাস্তের দাবিতে আন্দোলন করায় তারা অফিস কক্ষে ঢুকতে পারছেন না। বারান্দায় বসে সময় পার করছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে চলমান আলিম টেস্ট পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানও বন্ধ রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বর্তমানে মাদ্রাসার কোন পরিচালনা কমিটি নেই। এডহক কমিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে বরখাস্ত করতে পারেন না। সাময়িক বরখাস্তের চিঠির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন। রিটের রায় তার অনুকুলে এসেছে।
আদালতের রায়কে সম্মান জানিয়ে সভাপতি পুনরায় তাকে মাদ্রাসায় যোগদানের পত্র দিয়েছেন। বিষয়টি তিনি বর্তমান সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ হোসেন সহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেছেন।
মন্তব্য করুন