কুয়াশায় ঢাকা রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলা
পঞ্চগড়ে ফের মৃদু শৈত্য প্রবাহ পাঁচদিন পর দেখা মিলেছে সূর্যের
করতোয়া ডেস্ক : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় পাঁচদিন পর সূর্যের মুখ দেখা গেলেও কনকনে হাড় কাঁপানো শীতের তীব্রতা কমেনি। সকালে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও রৌদের প্রখরতা ছিল না। কুয়াশায় ঢাকা থাকছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলা। শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে মানুষসহ প্রণিকূল।
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় পাঁচদিন পর সূর্যের মুখ দেখা গেলেও কনকনে হাড় কাঁপানো শীতের তীব্রতা কমেনি। সকালে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও রৌদের প্রখরতা ছিল না। এদিকে শীত ঋতুর মাঘ মাসে সপ্তাহ জুড়ে কয়েক দফা মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে।
এছাড়া গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির ন্যায় কুয়াশা ঝড়েছে। ফলে উত্তরের হিমেল বাতাস ও কনকনে শীতে সাধারণ মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, গত শুক্রবার বিকেলে তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা, সিপাইপাড়া, তিরননই হাট, খয়খাটপাড়া ও শালবাহান এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে।
এ মৌসুমের ১ম বৃষ্টিপাত হওয়ায় ঘনকুয়াশা কেটে গেলেও কনকনে শীতের প্রকৌপ আরেক দফা বেড়েছে। শীতের কারণে খেটে খাওয়া চা বাগান ও পাথর কুয়ারির সাথে যুক্ত কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় শিশু কিশোর ও বৃদ্ধরা সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
তেঁতুলিয়া ১ম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার এর পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দিনাজপুরে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত ৫ দিন পরে গতকাল সূর্যের মুখ দেখা গেলেও কুয়াশা থাকায় সূর্যের আলো মাটিতে না পৌঁছায় শীতের প্রকৌপ কমেনি।
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসা হিমেল বাতাস আর ঘনকুয়াশায় উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের রাজারহাটে অব্যাহত রয়েছে শীতের দাপট। শীতের দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনজীবন।
গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৮শতাংশ বলে নিশ্চিত করেছেন রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার।
তিনি বলেন, ‘বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অত্যাধিক হওয়ায় দিনের বেলা সূর্যের দেখা মিলছে না এবং সূর্যের কাঙ্খিত তাপ পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৮ শতাংশ এবং গত ২৪ ঘণ্টায় বাতাসের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ০৬-১০ কিলোমিটার।’ গতকাল বেশ কয়েকবার সূর্য দেখা দিয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় পরিস্থিতি আরও উন্নতি হতে থাকবে। এছাড়া এবারের শীত মৌসুমে এটিই শেষ শৈতপ্রবাহ বলে তিনি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন
এদিকে, কনকনে ঠান্ডা ও হালকা কুয়াশায় আবৃত হয়ে পড়েছে চারদিক। শীতার্তরা তীব্র কষ্টের দিন পার করছেন। দিনমজুর, শ্রমিক শ্রেণির মানুষেরা শীতের তীব্রতায় কাজও করতে পারছেন না। ফলে আয় কমেছে তাদের। এসব কারণে এ উপজেলার শীতার্ত ও ছিন্নমূল মানুষের রাত কাটে এখন অসহনীয় দুর্ভোগে। শীতের একেকটি রাত যেন তাদের কাছে দুঃস্বপ্ন।
অপরদিকে, শৈত্যপ্রবাহের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধারা। প্রায়ই সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) জানান, দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে গত চারদিন থেকে মাঘের শীত ও কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘনকুয়াশার চাদরে ঢাকা এ অঞ্চলের জনপদ। ফলে গত চারদিন থেকে দেখা নেই সূর্যের। শীতের তীব্রতা ও কনকনে ঠান্ডায় সবচেয়ে কাহিল হয়ে পড়েছে নিম্ন্ন আয়ের মানুষ। সব থেকে বিপাকে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা।
ঠান্ডার প্রকোপ বেড়ে গেছে এ অঞ্চলে। বিশেষ করে জেলা ১৬টি নদ-নদীর বর্তী চরাঞ্চলের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। ওই সব অঞ্চলে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত রোগে। অনেকে ঠান্ডার প্রকোপ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় জেলা জুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফুলবাড়ী উপজেলা নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক সিদ্দিক খন্দকার জানান, চার পাঁচদিন থেকে সেই ঠান্ডা। শীতের কারণে আলু ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঠান্ডায় হাত পা বরফ হয়ে গেছে তার পরেও ক্ষেত রক্ষা করতে কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করছি। জানি না সূর্যের দেখা মিলবে কবে।
এবিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, জেলার ৯ উপজেলায় ৩৪ হাজার ৭২২টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদাভেদে বিতরণ কাজ চলমান রয়েছে। আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে তা বন্টন করা হবে।
মন্তব্য করুন