ভিডিও বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

আজ বিশ্ব যক্ষা দিবস

বগুড়ায় যক্ষ্মায় পাঁচ বছরে মৃত্যু ১২শ’

আজ বিশ্ব যক্ষা দিবস। বগুড়ায় যক্ষ্মায় পাঁচ বছরে মৃত্যু ১২শ’, ছবি: সংগৃহীত।

স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া শহরের ত্রিশোর্ধ রিনার ( ছদ্ম নাম ) মাঝে মাঝেই জ¦র ও ক্লান্ত লাগতো। পাশাপাশি স্তনের নিচে প্রায়ই ব্যাথা হতো। প্রথম প্রথম সাধারণ জ¦র বা শরীর খারাপ লাগা ভেবে নাপা বা প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট সেবন করতেন। কিন্তু কোনভাবেই ক্লান্ত লাগা কমছে না এছাড়া স্তনের নিচের ব্যাথাটাও দিনদিন বাড়ছে। অবশেষে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শনাক্ত হয় স্তনের নিচেই টিবি (যক্ষ্মা) রোগ বাসা বেঁধেছে। যক্ষ্মার কথা শুনে তো অবাক রিনাসহ তার পরিবার। কেননা তাদের ধারণা ছিল এই রোগ সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষদের বা ধূমপানকারীদেরই হয়। রিনা তো বেশ স্বচ্ছল পরিবারের।  এরপর একটানা দেড় বছর ডট চিকিৎসা এবং প্রতিদিন নিয়ম করে দুইবেলা ডিম ও দুধসহ পুষ্টিকর খাবার খেয়ে তার যক্ষ্মা রোগ সাড়ে।

জানা গেছে, যক্ষ্মা এখনো বিশ্বের ১০টি মৃত্যুজনিত কারণের মধ্যে অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, প্রতিদিন বিশ্বে চার হাজার মানুষ যক্ষ্মা রোগে মারা যান এবং ৩০ হাজার আক্রান্ত হন। তবে বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় ২০০০ সাল থেকে ৫৮ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ায় আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা। পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর হারও। গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা গেছেন ২০২৪ সালে। চিকিৎসা ও শনাক্ত হয়েছে ওই বছরই বেশি। এছাড়া এই রোগে নারীদের তুলনায় পুরুষরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। আর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ২৫ থেকে ৬২ বছর বয়সীরা। 

বগুড়া সিভিল সার্জন অফিসের প্রোগ্রাম অর্গানাইজার মো. আসমাউল হোসেন জানান, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত জেলায় যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২১৭ জন। চিকিৎসা নিয়েছেন ৩১ হাজার ৮০১ জন। এছাড়া ৩ লাখ ২০ হাজার ৯০৪ জনের কাশি পরীক্ষার মাধ্যমে যক্ষ্মা শনাক্ত হয়েছে ১৯ হাজার ১১৫ জনের। আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে পুরুষ ১৯ হাজার ৩৮ জন, নারী ১২ হাজার ৭৬৩ জন এবং শিশু ১ হাজার ৫৫৩ জন রয়েছেন। গেল পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ২০২৪ সালে। ওই বছর যক্ষ্মায় মারা গেছেন ৩৪৯ জন। ২৪ সালে ৭ হাজার ৪১০ জন রোগী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া ওই বছর ৮৩ হাজার ৯৯৬ জনের কাশি পরীক্ষা করে শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৪০১ জন। এছাড়া যক্ষ¥ায় ২০২৩ সালে মারা গেছেন ২৮৬ জন, ২০২২ সালে ২০৮ জন, ২০২১ সালে ১৫৬ জন এবং ২০২০ সালে ২১৯ জন মারা গেছেন।

আরও পড়ুন

 সবচেয়ে কম শনাক্ত হয়েছে কোভিডের সময়। ২০২০ সালে ১৭ হাজার ১৯২ জনের কাশি পরীক্ষা করে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৮৬ জন। তবে কাশি ছাড়াও অন্যভাবে আক্রান্ত হয়ে ওই বছর চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ হাজার ৯৮৩ জন। এর পরের বছর ২০২১ সালেও কোভিড থাকায় ওই বছরও কাশি পরীক্ষা কম হলেও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল বেশি। ২২ সালে ৬ হাজার ৯২৭ জন যক্ষ্মা রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া ৫৪ হাজার ৯০৮ জনের কাশি পরীক্ষা করে শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ২৮০ জনের। গেল বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে যক্ষ্মা আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ ও গাবতলী উপজেলায়। ওই তিন মাসে বগুড়া সদরে ২৩৬, শিবগঞ্জে ২২৭ এবং গাবতলীতে ১৭৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর কম আক্রান্ত হয়েছেন আদমদীঘি, নন্দীগ্রাম ও সোনাতলা উপজেলায়। ওই তিনটি উপজেলায় শনাক্তের হার ১শ’রও নিচে।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের লিভার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আবু সালেহ মো. সাদেকুল ইসলাম বলেন, যক্ষ্মা (টিবি) একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা সাধারণত ফুসফুসকে প্রভাবিত করে। ফুসফুসের বাহিরেও একটি খাদ্য নালী, পেট, কিডনি, মস্তিষ্ক, হাড় ও নিমফ গ্রন্থিকে আক্রান্ত করতে পারে। ফুসফুসের টিবি আক্রান্ত ব্যক্তিরা কাশি, হাঁচি বা থুথু দিলে বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সক্রিয় টিবি লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রমাগত কাশি, বুকে ব্যথা এবং কাশির সাথে রক্ত বা কফ। অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, রাতের ঘাম, ক্লান্তি এবং ওজন হ্রাস। এছাড়াও অঙ্গভেদে ভিন্ন উপসর্গ থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু ফুসফুসের যক্ষ্মার সঙ্গে ব্যাপকভাবে পরিচিত। ফুসফুস ছাড়াও শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গেই যক্ষ্মা জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে। বিশেষ করে নাসিকা গ্রন্থি, কিডনি, অন্ত্র, অস্থি ও মস্তিষ্কে প্রায়ই বাসা বাঁধে জীবাণু। অঙ্গভেদে যক্ষ্মার লক্ষণ ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণ সব ধরনের যক্ষ্মাতেই দেখা দেয়। রাতে ঘুষঘুসে জ্বর ও ঘাম, ওজন হ্রাস, অরুচি এগুলো সব ধরনের যক্ষ্মাতেই দেখা দেয়। ফুসফুসে যক্ষ্মা দেখা দিলে কাশি, কফের সঙ্গে রক্ত, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা এগুলো হতে পারে। হাড়ে যক্ষ্মা হলে ব্যথা হতে পারে আক্রান্ত জায়গায়। কিডনিতে যক্ষ্মা হলে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। অন্ত্রে যক্ষ্মা হলে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে। সারাবিশ্বেই টিবি’র পাদুর্ভাব রয়েছে। করোনা পরবর্তী টিবি রোগের সংখ্যা উদ্বেগ জনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যক্ষ্মা রোগ সন্দেহ হলে অতিসত্বর নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন। মনে রাখবেন যক্ষ্মা রোগের সকল পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। 

 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত:সেনাপ্রধান

চামড়া সংরক্ষণে মসজিদ-মাদ্রাসায় ৩০ হাজার টন লবণ ফ্রিতে দেবে সরকার

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে মা-মেয়েকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে গেল ট্রাক

ঈদের আগে বগুড়ার ১২ পৌরসভার সাড়ে ৩৮ হাজার সুবিধাভোগী ভিজিএফ’র চাল পাবেন

বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনা নদী থেকে চায়না দুয়ারি জাল জব্দ ও ধ্বংস

বগুড়ার ধুনটে সরকারি জায়গা থেকে ভূমিহীনদের উচ্ছেদের অভিযোগ