নারী নির্যাতন

সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতার উৎকট রূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রায় নিত্য গণমাধ্যমে বহুমাত্রিক নারী নির্যাতনের যে চিত্র ফুটে উঠছে তাতে সঙ্গতই প্রশ্ন দাঁড়ায় এর শেষ কোথায়? ধর্ষণ সংঘবদ্ধ পরবর্তী হত্যার ঘটনাও ঘটছে। এর থেকে আমাদের কোমলমতি শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না।
প্রতিদিনকার পত্রিকার পাতা ওল্টালেই পাতাজুড়ে নারী-শিশুর ওপর পাশবিক নির্যাতনের যেসব নৃশংস ও লোমহর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয় তা শুধু অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্খিতই নয়, যে কোনো সভ্য সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য তা লজ্জারও বটে।
একটি স্বাধীন দেশে নিত্য দিন এ ধরনের নানা উৎকট চিত্র নারীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও সমাজের ব্যর্থতার চিত্রকেই তুলে ধরে। একই সঙ্গে সমাজের অভ্যন্তরে নৈতিক অবক্ষয়ের ভয়াবহ মাত্রাও নির্দেশ করে। কোনো সুস্থ সমাজ ও রাষ্ট্র নারী নির্যাতনের এমন দায় এড়াতে পারে না।
আমরা চাই, পরিস্থিতির আরো অবনতির আগেই সরকার ও প্রশাসন অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমনে কার্যকর ভাবে সক্রিয় হবে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এর ভয়াবহতা যেন আরো বেশি। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসনও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিবেক ও নৈতিকতাবোধকে জাগ্রত করতে পারছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুসারে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গত বছর সারা দেশে শুধু থানায় ১৮ হাজার ৯৪১টি মামলা হয়েছে। আদালতেও মামলা হয়। নারী নির্যাতনের মামলা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের মতে, থানায় যত মামলা হয়, তার প্রায় ১০ শতাংশের সমপরিমাণ হয় আদালতে।
ফলে ২০২৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হওয়া মামলার সংখ্যা ২০ হাজারের কম হবে না। ২০ হাজার মামলা একটি সংখ্যা মাত্র। কিন্তু ভুক্তভোগী নারী, তার সন্তান, তার মা-বাবা, তার স্বজনের কাছে নির্যাতনের ক্ষত উপশমযোগ্য নয়।
তাদের বেদনা বয়ে বেড়াতে হয়, বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ফেরে তাদের ভোগান্তি বাড়ে, থেকে যায় আক্ষেপ। এক সময় অনেকে বিচারের আশাও ছেড়ে দেন।
আরও পড়ুনএ ছাড়া নারী নির্যাতনের অনেক খবর আড়ালেই রয়ে যায়। সব মিলিয়ে নারী নির্যাতনের সার্বিক চিত্র ভয়াবহ।
দেশের উন্নয়ন হচ্ছে- এ কথা প্রায় সর্বত্র উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই যে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা যাচ্ছে না, তার কী হবে।
সমাজে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ নারী ও শিশু। তাদের নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করা হচ্ছে। ধর্ষণ-গণধর্ষণ করার পর তাদের হত্যা করা হচ্ছে। পরিবার মামলা করেও এর প্রতিকার পাচ্ছে না। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বর্বর হচ্ছে শিশু ধর্ষণ ও হত্যা। যে করেই হোক সমাজে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এর দায়িত্ব সরকারের।
সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন হলে চলবে না। মনে রাখতে হবে নারী স্বাধীনতার পূর্ব শর্ত হচ্ছে সমাজে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে দেশের মানুষকে সচেতন ও সোচ্চার হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। সমাজ থেকে ধর্ষণের মতো অপরাধ রোধ করতে হলে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ধর্ষকদের বয়কট করতে হবে। এদের কোনোও সংগঠনে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না।
তাদের বোঝাতে হবে, ধর্ষকদের কোন পরিবার, বন্ধু ও সহযোগী নেই। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে দ্রুত নতুন আইন ও তা যথাযথ প্রয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে।
দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে যাতে আর কেউ নারী নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করতে দু:সাহস না দেখায়, তাও নিশ্চিত করতে হবে।
মন্তব্য করুন