করতোয়া ডেস্ক : উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে গত তিনদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে বন্যার সৃষ্টি হলেও আজ সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে পানি কমে যাওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। তবে পানি কমার সাথে সাথে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমে যাওয়ায় ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করছে বানভাসি মানুষ। তবে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনসহ ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন।
আজ সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৫১ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগের দিন রোববার সকালে তিস্তার পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
স্থানীয়রা জানায়, গতকাল রোববার দিনগত রাত থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। মানুষ ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করলেও লালমনিরহাট সদর উপজেলা ও আদিতমারী উপজেলার কিছু মানুষ এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি। বন্যায় রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। অপরদিকে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
কৃষি বিভাগ সূত্র মতে, তিনদিনের বন্যায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় তিন হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বন্যায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১১টি ও আদিতমারী উপজেলার আটটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তিস্তা চরের কোহিনুর বেগম বলেন, তিনবিঘা জমির পাকা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আগামীতে কী খাবো সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
আজ সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এনিয়ে কথা হলে তিস্তার ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী উপ-প্রকৌশলী রাশেদীন ইসলাম বলেন, বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীতে উন্নতি হয়েছে তিস্তার বন্যা পরিস্থিতি। সোমবার সন্ধ্যা তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েণ্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেণ্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে গত রোববার সকাল ছয়টায় ওই পয়েণ্টে নদীর পানি বিপৎসীর দুই সেণ্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় ২০ সেণ্টিমিটার নিচে নামে।
তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মেজবাহুর রহমান বলেন, ‘গত দুই দিনের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বিতরণের জন্য ৩০ মেট্রিক টন চাল ও এক হাজার ৫৮০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যার বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে’।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আতিকুর রহমান বলেন,তিস্তার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, ডিমলা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি ঘটেছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রিশ মেট্রিক টন চাল ও ১৫৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এক হাজার ৫৮০ পরিবারের তালিকা তৈরি করে এসব চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে গত তিনদিন ধরে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যার সৃষ্টি হলেও সোমবার সকাল থেকে পানি কমে যাওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। তবে পানি কমার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙনের। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকাল ৯ টার তথ্য মতে, তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি কমে বিপৎসীমার ২৯.৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশাম এলাকার মো. আব্দুল হাই বলেন, গত দুদিন ধরে তিস্তার পানি ঢুকে তিস্তার চরের বাদাম, সব্জি ও আমন ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার কারণে সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হলেও ধান ক্ষেতের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে পানি কমার সাথে সাথে নদী ভাঙনের মুখে পড়েছি। তিস্তা নদীতে পানি বাড়লেও ভাঙে, কমলেও নদী ভাঙন শুরু হয়।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, তিস্তা নদীর গতিয়াশাম ও খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী ভাঙনের মুখে পড়ার খবর পেয়েছি। ওসব এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে উঠতি আমন ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীতে বিলীন হচ্ছে। গত দুই মাসে উপজেলার কাপাসিয়া, হরিপর, শ্রীপুর ও চন্ডিপুর ইউনিয়নে পাঁচশতাধিক বিঘা ফসলি জমি ও অন্তত ১০০টি বসতবাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে।
উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। প্রতি বছর তিস্তায় পানি বাড়লে বা বন্যা দেখা দিলেই শুরু হয় নদী ভাঙন। যে ভাঙন চলতে থাকে মাসের পর মাস। নদী পাড়ের মানুষের অভিযোগ, সরকার স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধ, ড্রেজিং, নদী খনন ও সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রতি বছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি, হাজারও একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে।
কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনজু মিয়ার দাবি- নদী খনন, ড্রেজিং, স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে বহুবার চাহিদা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু আজও কোন ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ হতে নেয়া হয়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মন্ডল জানান, কাপাসিয়া ও হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন নদীভাঙন শুরু হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।