গায়েবানা জানাজায় হাজারো মানুষ
বগুড়ার পুত্রবধূর শোকে স্তব্ধ জনপদ, বন্ধ ছিল সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
স্টাফ রিপোর্টার : তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) শোকাচ্ছন্ন ছিল বগুড়া। বগুড়ার সন্তান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, বগুড়ার পুত্রবধূ, সবার প্রিয় এই নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ও রাষ্ট্রীয় শোকের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে সকাল থেকেই জেলা শহরের ছোট-বড় সব ধরনের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিপণীবিতান থেকে শুরু করে যাবতীয় ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রাখেন বগুড়ার আপামর ব্যবসায়ী।
শহরজুড়েই যেন এক শোকাচ্ছন পরিবেশ। এমনকি শহরের ফুটপাতজুড়ে চায়ের দোকানগুলোও ছিল বন্ধ। উত্তরাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র বগুড়ার সাথে সাথে এই জনপদ কার্যক্রমে যে স্থবিরতা নেমেছিল, তা ছিল বগুড়ার পুত্রবধূকে হারানোর শোক।
শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা থেকে শুরু করে নিউ মার্কেট, সেখ সরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেট, আল আমিন কমপ্লেক্স, রানা প্লাজা, পুলিশ প্লাজা, সপ্তপদী মার্কেট, বিআরটিসি শপিং কমপ্লেক্স, রেলওয়ে মার্কেট, বড়গোলা, টিনপট্টি, বেশিরভাগ বাজারসহ শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দোকানপাট বন্ধের চিত্র। এছাড়াও শহর লাগোয়া ছোট-বড় বন্দরগুলোতেও স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি শোক ব্যানার টানিয়ে দোকাপাট না খুলে বেচাকেনা বন্ধ রেখে শোক পালন করেন।
শহরজুড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানীদের যে ব্যস্ততা তাও চোখে পড়েনি এদিন। ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যামাণ পণ্য বিক্রেতারও এদিন তাদের পসরা নিয়ে শহরে জাড়ো হননি। সুনসান নীরবতায় শহর ছিল প্রায় ফাঁকা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এদিন বের হতে দেখা যায়নি কোন মানুষকে, তাই শহরের বিভিন্ন ধরনের অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল ছিল একেবারেই সীমিত। শহরের ব্যস্ততম, বাণিজ্যিক ও প্রাণকেন্দ্র যেমন ছিল ফাঁকা, তেমনি পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানও আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) খোলেননি ব্যবসায়ীরা।
নিউ মার্কেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ী রাজিব হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আমাদের বগুড়ার মানুষ। প্রিয় এই নেত্রীর বড় পরিচয় তিনি বগুড়ার পুত্রবধূ, তার প্রতি সন্মান জানাতেই একদিন দোকান বন্ধ রাখা। আমরা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি। ফুটপাতের চা বিক্রেতা হাবিল উদ্দিন বলেন, আজ দোকান খুলিনি। শহরে এমনি এসেছি।
আমি কোন রাজনীতি না করলেও বগুড়ার মানুষ হিসেবে বেগম জিয়াকে শ্রদ্ধা করি, প্রতিবার তাকেই ভোট দেই। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতেই দোকান না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন। শহরের পুলিশ প্লাজার মোবাইল ফোন বিক্রেতা সোহেল রানা বলেন, ব্যবসায়ীকভাবেই দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। বেগম খালেদা জিয়া বগুড়াবাসীর প্রাণে মানুষ। তার মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। এমন শোকের দিনে ব্যবসা করার মতো মানসিকতা নেই।
আরও পড়ুনএদিকে বগুড়া জেলা বিএনপি কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষকে কালো ব্যাজ ধারণ করে জড়ো হতে দেখা যায়। এছাড়াও অসংখ্য নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ বিভিন্ন পরিবহনে ঢাকায় পৌঁছে প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে জানাজায় অংশ নিয়েছেন।

আর যারা ঢাকায় যেতে পারেননি, তারা প্রিয় নেত্রীর গায়েবানা জানাজায় শরিক হতে জড়ো হয়েছিলেন শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে। এদিন বাদ জোহর এই মাঠে দল-মত নির্বিশেষে সব ধরনের হাজার হাজার মুসল্লি জড়ো হন আপসহীন প্রিয় এই নেত্রীর জানাজায় অংশ নিতে। অশ্রুসিক্ত হয়ে তারা বেগম জিয়ার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে আজ বুধবারেও (৩১ ডিসেম্বর) মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া করা হয়। বগুড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদে বাদ আসর বিশেষ দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মসজিদের ইমাম ও ইমাম মুয়াজ্জিন সমিতির সভাপতি মুফতি আলহাজ্ব আব্দুল কাদের দোয়া পরিচালনা করেন।
মন্তব্য করুন








_medium_1767195926.jpg)