পাবনার ভাঙ্গুড়ায় দিগন্তজুড়ে হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি: পাবনা ভাঙ্গুড়া উপজেলা জুড়ে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। যতদূর চোখ যায়, শুধু হলুদ আর হলুদ। সরিষা ফুলে ঢাকা বিস্তীর্ণ মাঠ দেখে মনে হয়, প্রকৃতি নিজ হাতে হলুদের চাদর বিছিয়ে দিয়েছে। বাতাসে দুলতে থাকা ফুলের ফাঁকে ফাঁকে মৌমাছির গুঞ্জন আর মাঠের আইলে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষকদের চোখ-মুখে এক রাশ আশা। এ যেন শুধু ফসলের মাঠ নয়, বরং কৃষকের স্বপ্নের রাজ্য।
গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে পড়েছে। বিনামূল্যে পাওয়া উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা ফলনে কৃষকের প্রশান্তির হাসি দীর্ঘ হচ্ছে। ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় গত বছরে প্রায় ৬হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়ে ছিলো। উৎপাদন হয়েছিল ১১হাজার ২৭০মে.টন সরিষা।
এ বছর কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরিষা চাষে কৃষকেরা দারুণ অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এ বছর ৬হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এপর্যন্ত ৬হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের জমিতে এখনো অনেকে এ ফসলের চাষ করছেন। যা লক্ষ্যমাত্রার বেশি চাষ হবে বলে, স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের ধারণা।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষিবিভাগ। স্থানীয় কৃষি বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণকালে নির্দেশনা দিয়েছেন, শুধু ধান চাষ করলে হবে না। পাশাপাশি ভুট্টা, সরিষা, আলু, সূর্যমুখী ফুল, পাট, তিল, গবাদি প্রাণীর ঘাসসহ অন্যান্য ফসল চাষের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে।
কৃষকের নিপুন হাতে প্রকৃতির বুকে গড়ে তোলা ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ার আশা কৃষকদের। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আগামীতে আরও সরিষার আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা-ভাবনা করছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
আরও পড়ুনখোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে পৌর এলাকা ভাঙ্গুড়া, খানমরিচ, দিলপাশার, অষ্টমনিষা, পারভাঙ্গুড়া ও মন্ডতোষ ইউনিয়নে দু’ শতাধিক কৃষক ১৫ থেকে ৩০বিঘা করে জমিতে অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করেছেন।
উপজেলার খানমরিচ ইউপি’র পুকুর পাড় গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম ফকির, সুলতানপুর গ্রামের কৃষক সুলতান মাহমুদ জানান, প্রতি বিঘা সরিষা চাষে খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। এ ফসলের বাজারে চাহিদা ভালো থাকে এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। বর্তমান সরিষার গাছ, ফুল-ফল ভালো হয়েছে। আশা করছি, বাম্পার ফলন হবে। গত বছরের মতো এবারও লাভবান হতে পারবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শারমীন জাহান বলেন, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় বারি-৮, বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-১৮, বিনা-৪, বিনা-৯, বীজ সরবরাহ ও বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, বারি-১৪ সরিষার গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করায় জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে।
অপর দিকে চলতি মৌসুমে বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে মধু ব্যবসায়ীরা সরিষা ক্ষেতে মৌবক্স স্থাপন করে মধু উৎপাদন করে দেশের মধুর চাহিদা মেটাচ্ছে। এ জাতের সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণ কম লাগে। তাই এ জাতের সরিষা চাষের জন্য আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধ করা এবং বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন








