ভিডিও মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৬ দুপুর

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এক আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এক আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া, ছবি: সংগৃহীত।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বিএনপি মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।

একজন সামান্য গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে যে উত্থান খালেদা জিয়ার ঘটেছে, রাজনীতির ইতিহাসে সেটা এক বিরল ঘটনা। খালেদা খানম পুতুল থেকে অনেকটা যেন আচমকাই খালেদা জিয়ায় পরিণত হন জনমানুষের এই নেত্রী। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় নারী সরকারপ্রধান। এছাড়া তিনি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন।

খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালে ভারতের জলপাইগুড়িতে (ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তর দিনাজপুর) জন্ম গ্রহণ করেন। তবে তার বাবার আদি নিবাস ফেনীর ফুলগাজীতে। বাবা ব্যবসায়ী ইস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার। খালেদা জিয়ার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরের মুদিপাড়া গ্রামে। ১৯৬০ সালে দিনাজপুর সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন খালেদা জিয়া। পরে তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন। কলেজে পড়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর পড়াশোনা আর এগিয়ে নিতে পারেননি। 

খালেদা জিয়া ১৯৬০ সালে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মূলত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়েই খালেদা জিয়া জড়িয়ে পড়েন বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে খালেদা জিয়া কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। পরে ১৬ মে নৌপথে ঢাকায় আসেন। বড় বোন খুরশিদ জাহানের বাসায় ছিলেন ১৭ জুন পর্যন্ত। ২ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে এস আবদুল্লাহর বাসা থেকে পাকিস্তানি সেনারা তাকে ও তার দুই ছেলেকে বন্দি করে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিলেন।

স্বামী জিয়াউর রহমান দেশের রাষ্ট্রপতি হলেও রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিক পরিক্রমায় জিয়া হত্যার পর দলের নেতাকর্মীর আহ্বানে বিএনপির হাল ধরেন তিনি। নীতি ও আদর্শে অটুট থাকায় তিনি আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার এবং ২০০১ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন করে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। বিএনপি’র চেয়ারপারসন হিসেবে টানা প্রায় ৪১ বছর দায়িত্ব পালন করছেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর মার্চে তিনি দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে পদোন্নতি পান। বিচারপতি আবদুস সাত্তার অসুস্থ হলে ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন এবং একই বছরের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলের চতুর্থ কাউন্সিলে দ্বিতীয়বার, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তৃতীয়বার এবং ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের দশম কাউন্সিলে চতুর্থবারের মতো বিএনপির চেয়ারপারসন হন।

আরও পড়ুন

বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পরই নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়েন খালেদা জিয়া। দল ঐক্যবদ্ধ রেখে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে কোনোরকম সমঝোতা না করেই আপসহীন আন্দোলন করে গেছেন। ফলে এরশাদের পতন ত্বরান্বিত হয়। ১৯৮৩ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সাতদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই বছর সেপ্টেম্বরে জোটের মাধ্যমে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফায় আন্দোলন চলতে থাকে। ওই বছরের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাতেও এরশাদবিরোধী আন্দোলনে দমে যাননি।

১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া ‘এরশাদ হটাও’ এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। একটানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বিএনপি। নির্বাচনের ইতিহাসে খালেদা জিয়ার একটি অনন্য রেকর্ড হচ্ছে, পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে ২৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই তিনি জয়ী হয়েছেন। সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়াকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর তিনি আইনি লড়াই করে সবকটি মামলায় জামিন নিয়ে মুক্তি পান। কারাগারে থাকাকালে তাকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি যেতে অস্বীকার করেন।

(কার্যক্রম নিষিদ্ধ) আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর তিনি ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হন। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। বাকি দুটি মামলায় তার সাজা হয়েছে। এর মধ্যে তিনি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন। যদিও বর্তমানে তিনি নির্বাহী আদেশে জামিনে আছেন।

 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এক আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, বুধবার সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ দিনের শোক ঘোষণা

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ডাকসুর শোক প্রকাশ

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করল যুক্তরাষ্ট্র

শীতের মধ্যে সারাদেশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির আভাস