বগুড়ার নন্দীগ্রামে একই স্থানে কবরস্থান ও মহাশ্মশান, মৃত্যুতেও নেই বিভাজন
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি: পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নন্দীগ্রাম উপজেলায় দুই লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। ভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ হলেও সামাজিক জীবনে এখানে গড়ে উঠেছে পারস্পরিক সহনশীলতা ও সম্প্রীতির বন্ধন।
মৃত্যুর পর যেখানে অনেক জায়গায় ধর্মীয় বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, সেখানে নন্দীগ্রামে রয়েছে ব্যতিক্রমী এক মানবিক দৃষ্টান্ত, একই স্থানে পাশাপাশি অবস্থিত মুসলমানদের কবরস্থান ও হিন্দুদের মহাশ্মশান। পৌর এলাকার (বগুড়া-নাটোর) মহাসড়ক সংলগ্ন পূর্ব কুচাঁইকুড়ি নামক স্থানে অবস্থিত এই কবরস্থান ও মহাশ্মশান প্রায় দুশ’ বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
স্থানীয়রা জানান, এই কবরস্থান ও মহাশ্মশান গড়ে ওঠে পূর্বপুরুষদের উদ্যোগে। উদ্দেশ্য ছিল মৃত্যুতেও যেন মানুষে মানুষে ভেদাভেদ না থাকে। আজও সেই চেতনা বহন করে চলেছে পূর্ব কুচাঁইকুড়ি এলাকার এই স্থান।
পূর্ব কুচাঁইকুড়ি মন্দিরের পুরোহিত রঞ্জিত কুমার জানান, কবরস্থান ও মাহশ্মশান পাশাপাশি অবস্থিত। আমরা সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছি।
নন্দীগ্রাম মডেল মসজিদের ইমাম সাইদুল ইসলাম বলেন, ইসলাম শান্তি ও সহনশীলতার শিক্ষা দেয়। পাশাপাশি কবরস্থান ও শ্মশান থাকা প্রমাণ করে ধর্ম ভিন্ন হলেও মানুষ হিসেবে আমরা সবাই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
পৌর এলাকার হিন্দুপাড়ার বাসিন্দা শিক্ষক মদন কুমার বলেন, শৈশব থেকেই দেখে আসছি কবরস্থান ও মহাশ্মশান পাশাপাশি। এনিয়ে আমরা কখনও কোনো বিরোধ দেখিনি। আমরা একে অপরের ধর্মকে সম্মান করি। এই জায়গাটি আমাদের কাছে সম্প্রীতির প্রতীক।
আরও পড়ুননন্দীগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল বলেন, কুচাঁইকুড়ি কবরস্থান ও শ্মশানে যাতায়াতের জন্য পৌরসভার অর্থায়নে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। এতে সব ধর্মের মানুষের যাতায়াত, দাফন ও সৎকার কার্যক্রম অনেক সহজ হয়েছে।
পৌরসভার আরেক সাবেক মেয়র ও পৌর কৃষকদলের সভাপতি সুশান্ত কুমার শান্ত বলেন, এই স্থানে আমাদের গ্রামের বহু আত্মীয়-স্বজনের সমাধি রয়েছে। কবরস্থান ও মহাশ্মশান পাশাপাশি থাকলেও কখনও কোনো অশান্তি হয়নি।
তিনিও অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন বলে জানান। নন্দীগ্রাম পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন মাহমুদ বলেন, পৌরসভার অর্থায়নে কুচাঁইকুড়ি কবরস্থান ও শ্মশানে যাতায়াতের জন্য পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। শ্মশানের জন্য চুল্লি নির্মাণ এবং কবরস্থানের পুকুর ঘাট ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক শারমিন আরা বলেন, নন্দীগ্রামে ধর্মীয় সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, কবরস্থান ও মহাশ্মশান তার একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। এই সম্প্রীতি রক্ষা করা প্রশাসনের দায়িত্ব। সে বিষয়ে প্রশাসন সর্বদা সজাগ আছে।
মন্তব্য করুন





_medium_1765982911.jpg)
_medium_1765981746.jpg)
