নানা ধরনের ফসলে ভরপুর বগুড়ার সারিয়াকান্দির চরাঞ্চল
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি: সারিয়াকান্দির যমুনার চরাঞ্চল এখন ধান, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাসহ নানা ধরণের ফসলে ভরপুর হয়ে উঠেছে। একসময়ের পতিত জমিতে ফসল ফলিয়ে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন এবং তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। জমিতে নিরানি, পরিপক্ক ফসল উত্তোলন বা নতুন ফসল আবাদ করতে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার উপর দিয়ে যমুনা, বাঙালি, সুখদহ নদী বয়ে গেছে। ফলে এ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় চরাভূমি রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই এসব চরাভূমিতে পানিসেচ দেয়ার সুবিধা না থাকায় বিশালাকার জমি পতিত হয়ে থাকতো। কিন্তু গত কয়েক বছর আগে থেকে কৃষকেরা মাটিতে বোরিং করে ইঞ্জিন চালিত শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি উত্তোলন করছেন এবং পলিথিন পাইপের সাহায্য উচুঁ নিচু জমিতে তা সরবরাহ করে সেচ সুবিধা চালু করেছেন। ফলে নদীর মাধ্যমে উজান থেকে বয়ে আসা উর্বর পলিমাটিতে প্রচুর পরিমানে ফসল উৎপন্ন হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ধান, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাসহ নানা ধরনের ফসলে ভরপুর হয়ে উঠেছে। কৃষকেরা এখন এসব ফসলের পরিচর্যা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কেউবা জমিতে নিরানি দিচ্ছেন, কেউবা পানিসেচ দিতে ব্যস্ত রয়েছেন, কেউবা সদ্য পরিপক্ব হওয়া উচ্চ ফলনশীল জাতের কাঁচা মরিচ উত্তোলন করছেন, কেউবা বড়বড় মিষ্টি কুমড়া উত্তোলন করছেন, কেউবা উত্তোলিত ফসল ঘোড়ার গাড়িতে পরিবহন করে তা বাজারজাত করতে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বছর চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসল কৃষকরা বাজারজাত করে ভালো দাম পাচ্ছেন। ফলে তারা লাভবান হচ্ছেন এবং তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে উপজেলায় ২৬ শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে মরিচ, ৬৫ শ’ ২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান, ১ শ’ ১০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া, ৬ শ’ ৫ হেক্টর জমিতে আলু, ৩১ শ’ ৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা, ৭শ’ ৩৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, ৪ শ’ ৮৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু, ১২ শ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে পিঁয়াজসহ রসুন, গম, মাসকলাই, বিভিন্ন প্রজাতির ডাল, তিল, তিসি, চিনাবাদাম, আখ, নেপিয়ার ঘাসসহ নানা ধরনের ফসলের আবাদ হয়েছে।
আরও পড়ুনউপজেলার কাজলা ইউনিয়নের কৃষক আবু সাঈদ বলেন, চরের বিশালাকার জমিগুলো আগে পতিত পরে থাকতো। পানিসেচের অভাবে সেখানে বাদাম, কাউন, খেরাচি ছাড়া কোনও আবাদ হতো না। কিন্তু প্লাস্টিকের পাইপের সাহায্যে পানিসেচের মাধ্যমে এসব জমিগুলোতে আমরা সোনার ফসল ফলাচ্ছি। গত বছর ১৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা, ১০ বিঘা জমিতে মরিচ, ৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছি। এসব দু ফসলি জমিতে পাটেরও বাম্পার ফলন আমরা ঘরে তুলেছি। এ বছরও মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, বাদামসহ বেশকিছু ফসলের আবাদ করেছি। বেশ ভালো ফলন হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলে কৃষকেরা আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এখানে অনেক বেকার যুবকরা কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন এবং তাদের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। একসময়ের পতিত চরাঞ্চল এখন নানা ধরনের ফসলে ভরপুর হয়ে উঠেছে এবং চরাঞ্চল ধূ ধূ বালুচর অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে।
মন্তব্য করুন

নিউজ ডেস্ক
_medium_1765207820.jpg)
_medium_1765207838.jpg)
_medium_1765207107.jpg)
_medium_1765207031.jpg)
_medium_1765206419.jpg)

