ভোটকেন্দ্র ও কক্ষ
ইতোমধ্যে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে ইসি। দুটি ব্যালটে ভোট গ্রহণের সুবিধার্থে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা না বাড়লেও ভোটকক্ষ বা বুথের সংখ্যা প্রয়োজনে বাড়ানো হতে পারে, যা ২ লাখেরও বেশি হতে পারে।
ভোটার তালিকা
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, এবার চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন যুক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে এক হাজার ২৩৪ জন হিজড়া ভোটারও রয়েছেন। পুরুষ ভোটার দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন। আর নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন।
পোস্টাল ব্যালটে ভোট
এবারই প্রথম উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারকে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তিন ক্যাটাগরির (আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তি, ভোটের দায়িত্বে থাকা ও সরকারি কর্মচারীরা) ব্যক্তিরা এই সুযোগ নিতে পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার প্রবাসী নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। তফসিল ঘোষণার দিন থেকে দেশের তিন ক্যাটাগরির ভোটাররাও নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন।
মুদ্রণ ও সরবরাহ
নির্বাচনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী, বিশেষ করে ব্যালট পেপার, নির্বাচনের আইন ও বিধি সংক্রান্ত নথিপত্র এবং অন্যান্য মুদ্রণসামগ্রীর চাহিদা নিরূপণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনী সামগ্রী ছাপানো প্রায় শেষ। এখন কেবল ব্যালট পেপার ছাপানো বাকি রয়েছে।
আরও পড়ুন
আইন-শৃঙ্খলা ও কমিটি গঠন
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসি একাধিক কমিটি, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম তদারকি কমিটি, আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটি এবং নির্বাচনী আইন, বিধি ও ইনকোয়ারি কমিটির কার্যক্রম তদারকি কমিটি থাকছে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাহিনী তাদের সক্ষমতা ও পরিকল্পনা কথা জানিয়েছে ইসিকে। এবারের নির্বাচনের প্রায় ৬৭ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। সে বিবেচনায় কেন্দ্রের নিরাপত্তা বিভিন্ন বাহিনীর ফোর্স মোতায়েন থাকবে। সেনা থাকবে এক লাখের মতো। এ ছাড়া আনসার সদস্য থাকবে ছয় লাখের মতো। পুলিশ, র্যাব, কোস্ট গার্ড, গ্রাম পুলিশও নিয়োজিত থাকবে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন বাহিনীর আট লাখের বেশি সদস্য ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে পারে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজন অনুসারে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করবে। এবার সশস্ত্র বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে মোতায়েন থাকবে। এবং বাহিনীর হাতে থাকবে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও।
আচরণবিধি ও বিচার
এবার ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভোট কর্মকর্তারা শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষমতা পাবেন। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এ বিষয়ে বলেন, নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আদালতের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইনি চ্যালেঞ্জ
দলগুলোর মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনৈক্য থাকলেও তারা ভোটের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। দলগুলোর তাদের প্রার্থীও ঘোষণা দিচ্ছে। এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি বিএনপি চেয়ারপার্সন অসুস্থ থাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতাকে মাথায় রেখে তফসিল ঘোষণার প্রতি জোর দিয়েছে। তবে বিএনপি বলছে অনির্বার্য কারণ ব্যতীত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিলম্ব চায় না। এদিকে বাংলাদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে।
অন্যান্য চ্যালেঞ্জ
ভোটের সকল প্রস্তুতি নিয়ে দেশি বিদেশি মহল থেকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হলেও খোদ নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও বলা হচ্ছে।
সম্প্রতি সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেছেন, আমরা দেখছি যে, এই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি ভালোভাবে চলছে; চ্যালেঞ্জ অনিবার্যভাবে থাকবেই। …চ্যালেঞ্জ হবে যে আপনাদের এমন একটি প্রজন্ম রয়েছে, যারা আগের নির্বাচনে অংশ নেয়নি, হয় তারা নিজেরাই সেই নির্বাচনগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিল। কারণ তারা জানত যে সেগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না, অথবা তারা ভয় পেয়েছিল যে ভোট দেওয়ার কাজটি সহিংসতার সাথে হবে। সুতরাং, আপনাদের কাছে এমন এক প্রজন্ম এবং হয়তো আরও বেশি সংখ্যক ব্যক্তি রয়েছে যারা কখনও ভোট দেননি। এটি একটি চ্যালেঞ্জ হবে। …সময়মতো ভোট দিতে পারার জন্য ভোট দেওয়ার আগে কী করতে হবে তা মানুষকে বুঝতে হবে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, পোস্টাল ভোট নষ্ট হওয়ার একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আবার পোস্টাল ব্যালটে যারা ভোট দেবেন, তারা দেশের ভোটারদের আগেই ভোট দেবেন, তাই তাদের ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা করারও একটা চ্যালেঞ্জ থেকে যাবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, আগামী ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে তফিসল ঘোষণা হতে পারে। আর নির্বাচন হতে পারে ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। কিছু ছোট খাটো বিষয় বাকি রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা করলে ভোট সুষ্ঠু ও সুন্দর হবে বলে আশা করি।