ভিডিও শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে : মির্জা ফখরুল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে : মির্জা ফখরুল

দেশের বর্তমান সংকটের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ এখন আর নেই। নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে, দুটি ব্যালট থাকবে, একটি গণভোটের জন্য।

আজ শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

আলোচনা সভায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা যে কমিশন তৈরি করেছেন, সেই কমিশন প্রায় এক বছর আট-নয় মাস ধরে ঐকমত্যের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। সংস্কার ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রে একমত হয়েছিলাম। কয়েকটি বিষয়ে মতভেদ থাকায় আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলাম। অর্থাৎ, আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও মূল বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম, এটাই নিয়ম। যখন আমরা নির্বাচনে যাবো, তখন ম্যানিফেস্টোতে এই বিষয়গুলো থাকবে। জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে আমরা সেসব বিষয় সামনে আনবো, পার্লামেন্টে পাস করে দেশের পরিবর্তন ঘটাবো। আর যদি ভোট না দেয়, তাহলে সেটি বাদ পড়বে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, যেদিন ঐকমত্যের নথি জমা দেওয়া হলো, মনে আছে, সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল ১৭ তারিখ। তার আগে আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার ঠিকঠাক করে সব রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ধরে সেখানে স্বাক্ষর করলাম। কিন্তু যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেটা উপস্থাপন করা হলো, তখন দেখা গেলো অনেক পার্থক্য। বিশেষ করে আমরা যে ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো দিয়েছিলাম, সেগুলো উল্লেখ করা হয়নি। তাই আমরা বলেছি, ‘ইটস অ্যা ব্রিচ অব ট্রাস্ট’। অথচ তারা সেই আস্থার সেতু ভেঙে দিয়েছে। জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

ফখরুল বলেন, জনগণের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে। আমরা যে বিশ্বাসযোগ্যতা আশা করেছিলাম, তারা তা রাখেনি। তাই বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের।

বিএনপি সংস্কারের দল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, বিএনপি সংস্কারের দল। বিএনপির জন্মই হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। তখন সব পত্রিকা বন্ধ ছিল, তিনি সেগুলো খুলে দিয়েছিলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, সবই শুরু করেছিলেন শহীদ জিয়া। পরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডেনশিয়াল ব্যবস্থা থেকে পার্লামেন্টারি পদ্ধতিতে ফিরে আসেন। আমরা প্রথমে তা না মানলেও, তিনিই নির্বাচন করে মেজরিটি নিয়ে এসে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। সেই ব্যবস্থার অধীনে চারটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যারা বলে বিএনপি সংস্কার চায় না, তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। বিএনপি সব সময় সংস্কারের পক্ষে। আগে ১০ দফা, পরে ২৭ দফা, এরপর ৩১ দফা দিয়েছে, সবই সংস্কারের জন্য। আমরা প্রত্যেকটি সভায় উপস্থিত থেকেছি, আলোচনা করেছি, শেষ পর্যন্ত ঐক্যমতের সনদে সই করেছি। বিভ্রান্তি যদি আসে, সেটা ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসেছে।

নির্বাচন ও গণভোট প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা নির্বাচন করবো, নির্বাচন করতে চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু আজকে সেই নির্বাচন বানচাল করার জন্য একটি মহল উঠে-পড়ে লেগেছে, তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ এখন আর নেই। নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে, দুটি ব্যালট থাকবে, একটি গণভোটের জন্য, আরেকটি জাতীয় সংসদের জন্য। এই বিষয়ে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা এই নিয়ে রাস্তায় নেমে গোলমাল করছেন, তাদের অনুরোধ করবো জনগণকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। এক সময় আপনারা পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। আজকে জনগণ যে নির্বাচন চায়, তার বিরোধিতা করবেন না। এই দেশের মানুষ দেশ বিক্রির রাজনীতি ক্ষমা করে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করতে চাই। যাদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লড়েছি, একসঙ্গে কাজ করেছি, তাদের নিয়েই আমরা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট আসুন, সবাই মিলে নির্বাচনের সুযোগকে কাজে লাগাই। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করে জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার গঠন করি।

আরও পড়ুন

আলোচনা সভায় এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, দেশের ইতিহাসের দুর্ভাগ্য-স্বৈরাচারকে সরিয়ে আবার নিজেদের মধ্য থেকেই স্বৈরাচার জন্ম নেয়। গণতন্ত্রের কথা বলি, অথচ বারবার কেন স্বৈরাচারের রাজনীতি ফিরে আসে? বিএনপির দুর্বলতার কারণেই নির্বাচন নিয়ে আজ জটিলতা দেখা দিয়েছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ঐকমত্য কমিশন প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত। তারা কেন ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দিয়েছে, তার ব্যাখ্যা দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, এই সরকার সংবিধান সংশোধনের কোনো এখতিয়ার রাখে না। বিদ্যমান সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তারা নিজেদেরই বিপদে ফেলছে। সরকার দেশকে নতুন সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সংঘাত থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তা দেখানো হয়নি।

সাইফুল হক আরও বলেন, গণভোটের ঝুঁকি নেওয়ার মতো অবস্থানে দেশ নেই। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন বিভেদ সৃষ্টি হবে। ঐকমত্য কমিশন শেখ হাসিনার মতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়লে অন্তর্বর্তী সরকারও ঝুঁকিতে পড়বে, দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে যেতে পারে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ঐকমত্য কমিশন চাইলে তিন মাস আগেই গণভোটের আলোচনা শেষ করতে পারতো। জুলাই মাসেই সনদ ও ঘোষণাপত্র হয়ে গেছে, এখন আর নির্বাচন নিয়ে বাধা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক পর্দার আড়ালে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য অনেকেই প্রকাশ্যে ঝামেলা করছে।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আকাশের মেঘের মতো বারবার মত পাল্টাচ্ছে। এত অল্প সময়ে গণভোট করা সম্ভব নয়, জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

নুরুল হক নুর আরও বলেন, ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে জানুয়ারিতেই নির্বাচন হওয়া উচিত। জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে।

আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশের বর্তমান সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধারের সক্ষমতা ড. ইউনূসের নেই। বর্তমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ নির্বাচন।

জেএসডি সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রবের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম স্বপন, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চলচ্চিত্রে নায়ক রাজ রাজ্জাকের ছয় দশক

মধ্যনগরের সেই ছেলেটিই আজকের অভি মঈনুদ্দীন

আওয়ামী লীগ আরও ৫০ বছর ঝটিকা মিছিল করলেও লাভ হবে না: প্রেস সচিব

মারুফার উদ্দেশে যে বার্তা দিলেন ভারতীয় ক্রিকেটার জেমিমাহ

আজ ভূত দিবস

আজব কারখানা নিয়ে এসেছে গানওয়ালাদের গান ২