বগুড়া দুপচাঁচিয়ায় মৃৎশিল্পীরা এখনও পৈতৃক ব্যবসা ধরে রেখেছে
দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়া দুপচাঁচিয়া উপজেলার মৃৎশিল্পীরা এখনও তাদের পৈতৃক ব্যবসা ধরে রেখেছে। প্লাস্টিক, মেলামাইন সামগ্রীর দাপটে মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতে মাটির তৈরি খেলনাসহ বিভিন্ন সামগ্রী এখনও বাঙালির ঐতিহ্য হিসেবে বাজার দখল করে আছে।
উপজেলা সদর, পৌরসভাসহ তালোড়া পৌরসভার পালপাড়াগুলোর মৃৎশিল্পীরা এই দ্রব্যমূল্য আর প্রতিযোগিতার বাজারে তাদের নিপুণ হাতের তৈরি খেলনাসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন জিবিকা নির্বাহ করছেন।
গতকাল বুধবার উপজেলা সদরের চেঙ্গা পালপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, স্বপন পাল তার স্ত্রীকে নিয়ে টয়লেটের সেনেটারি রিং (পাট) তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাজের মাঝেই কথা হয় স্বপন পালের সাথে। সে জানান বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিক, মেলামাইনের সামগ্রীর দাপটে তাদের হাতে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীগুলো বাজারে টিকতে পারছে না। তবুও পৈতৃক ব্যবসা সূত্র ধরে এখনও এই কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, প্রতিদিন ৫০টা থেকে ৬০টা সেনেটারি রিং তৈরি করেন। তৈরিকৃত মাটির এই রিংগুলো রোদে শুকান। প্রায় ২০০টা টয়লেটের এই রিং শুকানোর পর ভাটায় আগুনে পুুড়িয়ে নিয়ে বাজারজাত উপযোগী করা হয়। প্রতি পিছ রিং বসানোসহ ১৫০ টাকা করে নিয়ে থাকেন। বিভিন্ন গ্রামের অনেকেই পাইকারিভাবে আবার অনেকে খুচরা এই সেনেটারি রিং কেনেন।
আরও পড়ুনপ্রতি মাসে গড়ে ৪০ হাজার টাকার এই টয়লেটের সেনেটারি রিং বিক্রি করে থাকে। এতে তাদের মাটি কেনা, ভাটায় পুড়ানোর এবং বসানো খরচ বাদ দিয়ে ২০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। তা দিয়ে একমাত্র ছেলেকে অনার্সে ও একমাত্র মেয়েকে কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশুনা করাচ্ছেন। সেই সাথে এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে কোনো মতে সংসার ও চালিয়ে যাচ্ছেন।
কথা হয় একই গ্রামের রঞ্জিত পাল, ফনিন্দ্র নাথ পাল, পলাশ পালসহ আরও অনেকের সাথে। তারাও জানান পৈতৃক ব্যবসার সূত্র ধরে এই পালপাড়ার ৩০ থেকে ৩৫টি পরিবার এখনও এই মৃৎশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। মাটির সামগ্রী তৈরি করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। বৈশাখী মেলা রাঙাতে মুখরিত হয়ে পরে পালপাড়ার মৃৎশিল্পীরা। বৈশাখকে ঘিরে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।
বাঙালি জাতির বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের খেলনা, ফলমূলসহ পুতুল বানানো নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মাটির তৈরি এসব খেলনা কেনার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ তাদের কাছে আসে। তারা কাঁদা মাটিকে পুঁজি করে নিজেদের আদি শিল্পকে ধরে রেখেছেন। সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা পেলে তারা আরো ভালোভাবে তাদের পৈতৃক ব্যবসাটি প্রসার ঘটাতে পারবে বলেও জানান।
মন্তব্য করুন










