বগুড়ায় চোরাপথে আসছে নয়া মাদক ‘এস্কাফ’
স্টাফ রিপোর্টার : ভারত থেকে চোরাপথে বাংলাদেশে আসছে ‘এস্কাফ’ সিরাপ নামে নয়া মাদক। ইতোমধ্যে এটি বগুড়াতেও ঢুকে পড়েছে। ফেনসিডিলের বিকল্প হিসাবে এটি ব্যবহার করছে মাদক সেবীরা। ‘এস্কাফ’ সেবনে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কিশোর, তরুণ ও যুবা। সেবনকারীদের কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে যায় বলে জানান চিকিৎসক।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে বগুড়ায় ‘এস্কাফ’ সিরাপসহ এক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাব-১২ বগুড়ার সদস্যরা আট বোতল ‘‘এস্কাফ’সহ ওই কারবারিকে গ্রেফতার করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বগুড়া সদরের ঠেঙ্গামারায় টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এর ডেন্টাল ইউনিটের সামনে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। স্মরণকালে এটিই বগুড়ায় এস্কাফ আটকের প্রথম ঘটনা।
গ্রেফতারকৃত রঞ্জু মিয়া (৪৪) নীলফামারী জেলার জলঢাকার গোলমুন্ডা গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া এর আগে র্যাব-১৩’র অভিযানে লালমনিরহাট থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য এস্কাফসহ ১জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অভিযানকালে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানার ভেলাগুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব কাদমা গ্রামে তল্লাশি করে আসামির শয়নকক্ষ থেকে অন্যান্য মাদকের সাথে ৬৩৭ বোতল এস্কাফ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক ব্যবসায়ী ভেলাগুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব কাদমা গ্রামের মো: আইয়ুব আলীর ছেলে মো: মশিউর রহমানকে (২২) গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়া গত ২রা অক্টোবর সকালে কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়ায় ৬০ বোতল এস্কাফ সিরাপসহ আবু জাহের (২৬) নামে এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে, শশীদল বিওপি। শশীদল ইউনিয়নের তেতাভূমি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক মো: জিল্লুর রহমান বলেন, এ দেশে ‘এস্কাফ’ একেবারে নতুন মাদক নয়। তবে বেশ কিছুদিন ধরে এই মাদকের চালান বেশি আসছে। মূলত কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত দিয়েই চোরাপথে এস্কাফ চোরাপথে বেশি ঢুকছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বগুড়ার এই কর্মকর্তা আরও বলেন, তিনি জেনেছেন ফেনসিডিল ও এস্কাফ মূলত একই জিনিস।
দুটিই কোডিন ফসফেট মিশ্রিত মাদক। ভিন্ন নামের কারণে মাদকসেবীরাও এটার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তবে এস্কাফসহ সব ধরনের মাদক প্রতিরোধ ও মাদক কারবারিদের ধরতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সক্রিয় রয়েছে।
আরও পড়ুনমাদক নিরাময় কেন্দ্র রেঁনেসা রিহ্যাব পুরান বগুড়ার চিকিৎসক মোহাম্মদ আখতারুল হুদা বলেন, ফেনসিডিলের মতই এস্কাফ সেবনে কিডনি ও লিভার অকেজো হয়ে পড়ে, নষ্ট হয় পুরুষের প্রজননক্ষমতা। এই মাদক সেবনে গলা–বুক শুকিয়ে যায় এবং ঝিমুনি হয়। এস্কাফ সেবন মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি ঘটে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে এর আগে গত ২০শে জুন কুমিল্লার আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় ৩৬ বোতল এস্কাফসহ দুই মাদক কারবারি ধরা পড়েন। এ ছাড়া লালমনিরহাট, দিনাজপুরেও বিভিন্ন সময় এস্কাফ সহ কারবারি ধরা পড়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে ৬৫ বোতল এস্কাফসহ এক মাদক কারবারি ধরা পড়ে।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, এই চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, দেড় বছর ধরে তাঁরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে এস্কাফ নিয়ে আসছিলেন। এরপর কাশির সিরাপ পরিচয়ে নিজেদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছিল।
ভারতের ল্যাবোরেট ফার্মাসিউটিক্যাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাশির ওষুধ হিসেবে এই সিরাপ তৈরি করে বলে জানা গেছে। তবে নেশাদ্রব্য হিসেবে বহুল ব্যবহারের কারণে ভারতে এটি নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ হলেও এর উৎপাদন বন্ধ হয়নি। এস্কাফ এখন চোরাপথে বাংলাদেশে ঢুকছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক মো: রাজিউর রহমান বলেন.তাদের কাছে তথ্য আছে, ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে ফেনসিডিলের পাশাপাশি এখন এস্কাফও দেশে প্রবেশ করছে । সীমান্ত এলাকায় ফেনসিডিলের দামের চেয়ে এস্কাফের দাম কম। এ কারণেও হয়তো মাদক কারবারিরা এস্কাফ নিয়ে আসছে। তবে এস্কাফসহ সব ধরণের মাদক প্রতিরোধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সজাগ রয়েছে।
মন্তব্য করুন










