ধৃত নারীর স্বীকারোক্তি সারিয়াকান্দিতে পানিতে ডুবে নয় হত্যা করা হয়েছে শিশু মেহেদীকে

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : সারিয়াকান্দিতে মেহেদী হাসান (৪) নামে এক শিশুকে দাফনের পরদিন জানা গেল তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। সুইটি বেগম (২৩) নামে এক গৃহবধূ হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এলাকাবাসী হাতে আটকের পর তাকে সারিয়াকান্দি থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। দুই শিশুর মধ্যে মারামারির ঘটনায় তাকে শিক্ষা দিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আটক সুইটি বেগম।
এ বিষয়ে মেহেদী হাসানের মা মিষ্টি আক্তার (২২) বাদি হয়ে সারিয়াকান্দি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মিষ্টি আক্তার উপজেলার নারচী ইউনিয়নের কুপতলা মধ্যপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর মোল্লার মেয়ে। অপরদিকে আটক আসামি সুইটি বেগমও একই গ্রামের হবিবর রহমানের মেয়ে।
এলাকাবাসী এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সদর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে আরিফের সাথে ৬ বছর আগে মিষ্টি আক্তারের বিয়ে হয়। সেখানে মেহেদী হাসানের জন্ম হয়। সংসারের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় এক বছর আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর সংসারের টানাপোড়েন হওয়ায় মিষ্টি আক্তার ঢাকায় গার্মেন্টসের চাকরিতে যায়। কিন্তু ছেলে মেহেদী হাসানকে নারচী গ্রামে তার মা মুন্নী বেগমের কাছে রেখে যায়। ফলে মেহেদী হাসান তার নানী মুন্নী বেগমের কাছে লালনপালন হতে থাকে। গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে মেহেদী হাসানকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরে আটক আসামির কথামতো বাড়ির ঝোঁপঝাড়ে খোঁজ নেয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ঝোঁপঝাড়ের পাশে একটি ডোবায় মেহেদী হাসানের লাশ পানিতে ভাসছে। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। সংবাদ পেয়ে মিষ্টি আক্তার ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে। এটি একটি স্বাভাবিক মৃত্যু মনে করে মেহেদী হাসানকে পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর তার দাদার বাড়ি সদর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে দাফন করা হয়।
পরদিন মেহেদী হাসানকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলার কথা আটক সুইটি বেগম তার মা আনিছা বেগমকে জানায়। এ খবর শুনে আনিছা বেগম অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর আনিছা বেগম মেহেদী হাসানকে মেরে ফেলার কথা বেশ কয়েকজনকে বলে দেয়। পরে এলাকাবাসী গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঘাতক সুইটি বেগমকে আটক করে পুলিশের কাছে খবর দেয়। পুলিশ সুইটি বেগমকে গ্রেফতার করে বগুড়া জেলা আদালতে প্রেরণ করে।
ধৃত সুইটি বেগমের কাছে থেকে জানা যায়, ১ মাস আগে মৃত মেহেদী হাসানের সাথে সুইটি বেগমের ছেলে জিসান মিয়া (৪) খেলতে গিয়ে মারামারি করে। এ নিয়ে সুইটি বেগমের সাথে মেহেদী হাসানের নানির ঝগড়া হয়। এর প্রতিশোধ নিতে, সুইটি বেগম গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে একটি ঝোঁপঝাড়ের ভেতরে মেহেদী হাসানকে একা পেয়ে তার মুখ চেপে ধরে, বুকের উপর হাঁটু গেড়ে দিয়ে, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বলে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে জানা য়ায়।
আরও পড়ুনসারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় বাদীর এজাহারের ভিত্তিতে আসামিকে গ্রেফতার করে তাকে বগুড়া জেলা আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আদালতে আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। আদালতের নির্দেশে ঘটনার শিকার শিশু মেহেদীর লাশ ময়না তদন্তের স্বার্থে কবর থেকে উত্তোলন করা হতে পারে।
মন্তব্য করুন