লালনের তিরোধান দিবস উদযাপিত হবে জাতীয়ভাবে, জানালেন ফারুকী
_original_1756386104.jpg)
বিনোদন ডেস্কঃ বাংলাদেশের অন্যতম সংগীতসাধক লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবসকে ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই সঙ্গে আরও কয়েকজন কালচারাল আইকনকে নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলেন জানালেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘ একটি পোস্টে বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, ‘একটা দেশকে ফিজিক্যাল কলোনি বানানোর আগে প্রথম যে কাজটা করতে হয়-সেটা হচ্ছে তাকে ইন্টেলেকচুয়াল কলোনিতে রূপান্তরিত করা। তাকে প্রতিনিয়ত বোঝানো যে, তোমার কোনো সংস্কৃতি নাই। থাকলেও তোমার সংস্কৃতি লো কালচার (নিচুমানের সংস্কৃতি রীতি)।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘যেমন ধরেন ‘লালনের গান’। আধিপত্যবাদের সংস্কৃতির ফ্রেমের সাথে মিলছে না বলে এটাকে হাই আর্ট (উচ্চমার্গীয় শিল্প) মানতে পারল না আমাদের উপনিবেশিক মন। ভদ্রসমাজ তখন চিন্তা করল এটাকে নিয়ে কী করা যায়? সহজ সমাধান হিসেবে ট্যাগ দিয়ে দিল ‘ফোক’। মানে মেইনস্ট্রিম (মূলধারা) না, সাব-কালচার (উপ-সংস্কৃতি)। তারপর ধরেন রক মিউজিক। এটা নিয়েও ভদ্রসমাজ বিপদে পড়ে গেল। একেতো তাদের সেট করা ‘হেজেমনিক ফ্রেমে’ হাই আর্ট হিসাবে ধরা যাচ্ছে না। সহজ সমাধান করল ট্যাগ দিয়ে ‘অপসংস্কৃতি’। এইভাবে আমাদের রাষ্ট্র বা এস্টাবলিশমেন্ট (বিদ্যমান প্রথা) চিরকাল আমাদের গৌরবময় ঐশ্বর্যগুলোকে রাষ্ট্রীয় উদযাপন ও স্বীকৃতির বাইরে রেখেছে।’’
আজকের ক্যাবিনেট মিটিংয়ে লালন সাঁইয়ের তিরোধন দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে-এই কথা জানিয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, ‘চব্বিশ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের দায় হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের চর্চা এবং অংশগ্রহণে যে সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠেছে সেটাকে উদযাপন করা। এই উদযাপন জাতিকে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মমর্যাদাপূর্ণ করে তোলে। পাশাপাশি এই উদযাপন বাইরের দুনিয়ায় আমাদের নিজেদের কালচারাল আইডেন্টিটি (সাংস্কৃতিক পরিচয়) তৈরিতে সাহায্য করে। এর প্রথম ধাপ হিসাবে আজকে (২৮ আগস্ট) ক্যাবিনেটে লালনের তিরোধান দিবসকে ‘ক’ শ্রেণির জাতীয় দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও কয়েকজন কালচারাল আইকন এবং কনটেমপোরারি মাস্টারকে (সমসাময়িক বিদ্বজ্জন) নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
আরও পড়ুনফারুকী লিখেছেন, “এস এম সুলতানের জন্মদিনকে ‘ক’ শ্রেণির জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি আলোচনা করেছি, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের বড় কালচারাল ফেনোমেনাগুলো নিয়ে। যেমন হুমায়ূন আহমেদ। আমার মনে হয় না তাঁর চেয়ে বেশি প্রভাব আমাদের লেখকদের মধ্যে কেউ রাখতে পেরেছেন। আলোচনা করেছি বাংলাদেশি রক আইকনদের উদযাপন করার বিষয়ে।”
সবশেষে উপদেষ্টা বলেন, ‘লালন উদযাপন করা দিয়ে আমরা রবীন্দ্র-নজরুলের বাইরে তাকাতে শুরু করলাম। এটা কেবল শুরু। আমি নিশ্চিত সেদিন বেশি দূরে না যখন কনটেমপোরারি মাস্টার আর্টিস্টদেরও আমরা সেলিব্রেট করব রাষ্ট্রীয়ভাবে। ধরা যাক, আইয়ুব বাচ্চুর কথাই। বাংলাদেশের এমন কোনো বর্গকিলোমিটার এলাকা পাওয়া যাবে না যেখানে তার গান বাজে নাই। তার মানের মিউজিশিয়ান যেকোনো দেশের জন্যই গর্বের। তাঁর জন্মদিন রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করতে মৃত্যুর কত শ’ বছর পর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে? দ্য আনসার, মাই ফ্রেন্ড, ইজ ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড (বন্ধু, সেই উত্তর বাতাসে ভেসে বেড়ায়)।’
প্রসঙ্গত, ১৭ অক্টোবর হলো লালন সাঁইয়ের তিরোধন দিবস। ১৮৯০ সালের এই দিনে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার নিজ আখড়ায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
মন্তব্য করুন