জীবন বিপন্ন প্রকল্পকে কোনভাবেই উন্নয়ন বলা যাবে না : আনু মুহাম্মদ

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ী রক্ষার আন্দোলন শুধু সম্পদ রক্ষার আন্দোলন ছিল না। এই আন্দোলন এই অঞ্চলের মানুষের জমি, তাদের বসতবাড়ি, কৃষি ও পানিসম্পদ, জীবন-জীবিকা ধ্বংস করে যে প্রকল্প হয়েছে সেগুলোকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন হয়েছে। এই আন্দোলন উন্নয়ন সম্পর্কে একটা নতুন দিশা দিয়েছে। যে সম্পদের ওপর মানুষ টিকে থাকে, তার প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে গৃহীত প্রকল্পকে উন্নয়ন বলা যাবে না। ফুলবাড়ীর মানুষ ২৬ আগস্টের আন্দোলনের মাধ্যমে তা বুঝিয়ে দিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুরের ‘ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস’ উপলক্ষ্যে ছোট যুমনা নদীর তীরে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ফুলবাড়ীর আন্দোলন শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্ববাসীর জন্যও একটি বড় ঘটনা, যেখানে জনগণকে অপ্রতিরোধ্য শক্তি দিয়েও গুলি করেও দমন করতে পারেনি। ঐক্যবদ্ধ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি বিদেশি কোম্পানির ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করেছিল। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি শিক্ষা। কোন প্রকল্প যদি মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে, মানুষের বসতবাড়ি, জমি, কৃষি, পানি সম্পদ, যে সম্পদের মানুষ টিকে থাকে তার চারিদিকের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে যদি কোন প্রকল্প হয় সেটাকে কোন ভাবেই উন্নয়ন বলা যাবেনা।
উন্নয়নের ধারণা দিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়ন হতে হবে এমন যাতে এমন কিছু পরিবর্তন হয় যার মধ্য দিয়ে মানুষের কর্মসংস্থান হয়, মানুষের শিক্ষা-চিকিৎসার সুযোগ বাড়ে, প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ ভালো হয়, মানুষের সুস্থতা বাড়ে, মানুষ ভালো থাকে-এই ধরনের একটা পরিবর্তনকে উন্নয়ন বলতে পারি। এই উন্নয়নের নীতি নির্ধারণ এমন ভাবে হতে হবে যাতে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকে। কিন্তু ফুলবাড়ীতে কয়লাখনির নামে যে উন্নয়ন সাম্রজ্যবাদিরা করতে চেয়েছিল তা ছিল ঠিক উল্টো। যার ফলে এই এলাকার মানুষ জীবন দিয়ে তা প্রতিহত করেছে। দীর্ঘ ১৯ বছরেও ফুলবাড়ীর ৬ দফা চুক্তির বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি ৩ দফা দাবি ঘোষণা করেন। এসব দাবির মধ্যে-ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বড়পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের চক্রান্ত বাতিল করা। আগামী অক্টোবরের মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারী দেন তিনি।
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎবন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েলের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় গণফ্রন্ট’র কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মোশারফ হোসেন নান্নু, বাসদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইদুল ইসলাম, সাম্যবাদী আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক মনিরুজ্জামান মনির, সিপিবি’র উপজেলা সভাপতি জয়প্রকাশ গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুজ্জামান জামান, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ উপজেলা শাখার সম্পাদক সনজিত প্রসাদ জিতু, তেল গ্যাস কমিটির সদস্য এমএ কাইয়ুম, হামিদুল হক প্রমুখ।
এর আগে সকাল ১০টায় আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পৌর শহরে পৃথক পৃথকভাবে শোক র্যালি বের করে ফুলবাড়ীর বিভিন্ন পেশাজিবী সংগঠন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও শ্রমিক সংগঠন। পরে তারা একে একে শহিদ স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
মন্তব্য করুন