যাকাতভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থাপনায় ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের ‘জীবিকা’ প্রকল্প

ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জীবিকা চাঁদপুর কর্তৃক বাস্তবায়িত "জীবিকা প্রকল্প (পর্ব-৩)" এর সমাপনী অনুষ্ঠান ২২ আগস্ট (শুক্রবার) বাবুরহাট মডেল টাউনে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশানাল স্কুলের ইউনুস খান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত জীবিকা চাঁদপুর প্রকল্প যাকাতভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার মাধ্যমে মানবিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই জীবিকার এক উজ্জ্বল মডেল হিসেবে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্পটি বেকারত্ব হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সামাজিক কল্যাণে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে যাত্রা শুরু করে প্রকল্পটি চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর, আশিকাটি, মইশাদী, তরপুরচন্ডী ইউনিয়ন এবং চাঁদপুর পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ২,৫০০ পরিবারের প্রায় ১২ হাজার সুবিধাভোগীকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যাকাত ব্যবস্থাপনার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে জীবিকা প্রকল্প ইতিমধ্যে সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ও ইতিবাচক পরিবর্তনের অনুকরণীয় উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
প্রকল্পের মূল দর্শন “যাকাত দান নয়, এটি অধিকার”। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই সুদমুক্ত অর্থায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করা হচ্ছে। ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন ও গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মো: সবুর খান এর সভাপতিত্বে তৃতীয় পর্বের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ, চেয়ারম্যান, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সাবেক সচিব ও সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড)। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেস জক্লাবেরর সভাপতি রহিম বাদশা, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম, সহকারি পরিচালক বিল্লাল হোসেন খন্দকার, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ শিবলী আহমেদ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ নূর খান, ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সেষ্যাল সায়েন্সস এর প্রকলন্প পরিচালক জনাব জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ বাবুরহাট শাখার প্রভাষক আবদুল্লাহ আল আমিনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ আসাদুল্লাহ খান।
সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সাবেক সচিব ও সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) এর চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, জীবিকা প্রকল্প দারিদ্র বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নের , এক অনন্য মডেল। এটি প্রমান করে যে, সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় সুবিধাভোগীরা কেবল আর্থিক সহায়তা পায় না বরং আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা এবং সম্মাানজনক জীবনের সুযোগ ও পায়। এই প্রকল্প চাঁদপুরের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা সমগ্র দেশের জন্য রোল মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে। তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই জীবিকা, নারীর ক্ষতায়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এধরনের উদ্যোগ সমাজের মর্যাদা ও স্বনির্ভরতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ন ভ‚মিকা রাখে।
অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, “দারিদ্র্য কোনো অভিশাপ নয়, এটি পরিবর্তনযোগ্য অবস্থা। ইসলামী অর্থনীতির সুশাসন ও যাকাতের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। জীবিকা প্রকল্প সেই সম্ভাবনার আলোকবর্তিকা।”
তিনি আরো বলেন, জীবিকা প্রকল্প শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, এটি এক আত্মিক জাগরণ, নৈতিক পরিবর্তনও সম্মানজনক জীনের পথে নতুন যাত্রা। সুবিধাভোগীদেও আস্থা , দক্ষতা ও মর্যাদা ফিরেয়ে আনা প্রকল্পের মূল লক্ষ্য । এই উদ্যোগ সমাজে স্বাবলম্বী ওসম্মানজনক জীবনের দৃস্টান্ত স্থাপন করেছে।
কর্তৃপক্ষ জানায় , ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত জীবিকা প্রকল্প যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে মানবিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই জীবিকার এক উজ্জ্বল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বেকারত্ব হৃাস, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সামাজিক কল্যাণে প্রকল্পটি এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করেছে। । জীবিকা প্রকল্প শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, এটি এক আত্মিক জাগরণ, নৈতিক পরিবর্তন ও সম্মানজনক জীবনের পথে নতুন যাত্রা।
জীবিকা প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য সাফল্যসমূহ:
● ৫ কোটি টাকার মূলধনের বিপরীতে ঘূর্ণায়মান তহবিলে ১৮৩.৯ কোটি টাকা ব্যবহৃত হয়ে ২,৫০০ পরিবারকে টেকসই জীবিকার সুযোগ প্রদান।
● ৬,৯০৫টি বিনিয়োগের মাধ্যমে ৮০% পরিবার কর্মসংস্থানে যুক্ত এবং ৫৬% পরিবার টেকসই আয়ে পরিণত।
● ৪৭% পরিবার মাসিক আয় ১৫,০০০ - ২৫,০০০ টাকায় উন্নীত হয়ে নিম্ন আয়ের স্তর থেকে মধ্যবিত্তে উত্তরণ।
● এ পর্যন্ত পরিবারগুলোর মোট সঞ্চয় ৩ কোটি ৫ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।
● কোভিড-১৯ মহামারীতে ১,১৫০ পরিবারকে খাদ্য ও রান্না করা খাবার সরবরাহ।
● ১৯,১৩৮ জন নারী ও কিশোরী জীবনদক্ষতা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ।
● ১৫,৯৪০ জন রোগী ইউনুস খান স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ।
● ৫৩০ শিশু প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও ৫০৪ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত।
● ২৬৮ জন শিশু ও সদস্য ৭টি কুরআন শিক্ষা কেন্দ্রে ধর্মীয় শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত।
● জরুরি অপারেশনাল সহায়তায় ৮৫ জনকে ১২.৩৮ লক্ষ টাকা প্রদান।
● ২৭৮ শিক্ষার্থী মাসিক বৃত্তি পেয়েছে, বর্তমানে ৯১ জন নিয়মিত বৃত্তি পাচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন জীবিকা চাঁদপুর প্রকল্পকে জাতীয় মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও ১,২০০ পরিবারকে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ক্যাপশনঃ ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জীবিকা চাঁদপুর কর্তৃক বাস্তবায়িত "জীবিকা প্রকল্প (পর্ব-৩)" এর সমাপনী অনুষ্ঠানে মায়ের আঁচল দলের সভাপতি কুলসুম বেগমের হাতে এক কোটি টাকার চেক হস্তহান্তর করছেন সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান (সাবেক সচিব ও সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ ও ড্যাফোডিল গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খান।
মন্তব্য করুন