বর্ষাতেও চলনবিলে মাছ নেই!

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : ‘মাছে ভাতে বাঙালি’-বাংলার চিরায়ত প্রবাদ। প্রতিদিন খাবারের মেনুতে এক টুকরো মাছ ছাড়া চলে না বাঙালির। সারা দেশ জুড়ে বিছিয়ে রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়। এসব মিঠা পানির সুস্বাদু দেশি বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য মাছের অভয়ারণ্য ছিলো এককালে। সে সব মাছেই দেশের আমিষের চাহিদা মিটে যেতো।
তবে আশঙ্কার বিষয় প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর মানুষের নানামুখী হস্তক্ষেপের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে কমতে শুরু করেছে মাছের উৎস ও উৎপাদন। একই সাথে হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। কিছু মাছ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে সম্পূর্ণরুপে। দেশে উৎপাদিত মোট মাছের অন্যতম প্রধান উৎস ছিল এক সময় দেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। কিন্তু প্রতি বছর কমছে এই বিলের মাছের উৎপাদন। বিলুপ্ত হচ্ছে মাছের প্রজাতি।
অনুন্ধানে জানা যায়, সত্তরের দশকে অপরিকল্পিতভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, নদী বন্ধ করা, নদীর মুখে স্লুøইসগেট নির্মাণসহ আশির দশকে উচ্চফলনশীল ইরি-বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু হলে মাছের অভয়াশ্রম খ্যাত চলনবিলের মাছের উৎস-উৎপাদন কমতে শুরু করে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, মাছের প্রজনন সংকুচিত হওয়া, ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারের কারণে ও সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ আহরণের ফলে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিল চলনবিল অঞ্চলে গত ৩০ বছরে মাছের উৎপাদন কমেছে ৬৩ শতাংশ। আর এ সময় বিলুপ্ত হয়েছে ২৫ প্রজাতির দেশি মাছ।
আরও পড়ুনমৎস্য সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১৯৮২ সালে চলনবিলে প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন ছিল ৩৬ হাজার ৯৯০ মেট্রিকটন, ১৯৯২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৭০০ মেট্রিক টনে। ২০০২ সালে ১২ হাজার ৬৬০ মেট্রিকটন , ২০০৯ সালে ১০ হাজার মেট্রিকটন, এবং ২০১২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৭০০ মেট্রিক টনে। এভাবেই ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মাছের উৎপাদন।
বিলুপ্ত হয়েছে ২৫ প্রজাতির মাছ। বিলুপ্তির পথে রয়েছে রয়েছে- গাঙচিংড়ি, মাগুর, পাবদা, কৈ, খরশলা, লেটুকি, বাঁশপাতারি, ফেঁসা, ফাতাশি, সুবর্ন খরকে, নান্দিনা, রানী(বউরানী), ভাঙ্গন, ঘোড়া, মহাশোল, তিলাশোল, ফলি, চিতল, গজার, রেনুয়া, সঁরপুটি, রিঠা, গাগর, বাইম, বাচা, দেশি পাঙ্গাস, আইড়, ভেদা, বাটা, চেলা, চাপিলা, বালিয়া, ও রায়েখ মাছ।
মন্তব্য করুন