ভিডিও মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫

নব্বইয়ের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চায় ছাত্রদল, পিছিয়ে নেই ছাত্রশিবির

ডাকসু নির্বাচন:  প্যানেল ঘোষণা করলো ছাত্রসংগঠনগুলো

ডাকসু নির্বাচন:  প্যানেল ঘোষণা করলো ছাত্রসংগঠনগুলো

সাকিব হাসান সজীব: আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির  বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বামজোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা। ইতোমধ্যে সংগঠন গুলো প্যানেল ও গুছিয়ে এনেছে। গতকাল দুপুরেই নির্বাচনের মনোনয়ন সংগ্রহ করে সংগঠনগুলোর প্রার্থীরা।

ছাত্রদল:

১৯৯০ সালের মতো ডাকসুতে চমক দেখাতে চেয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ১৯৯০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু)  নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে  ভিপি নির্বাচিত হন আমান উল্লাহ আমান এবং খায়রুল কবির খোকন জিএস নির্বাচিত হন। সেই সময়  নয়টি হলে ছাত্রদল থেকে ভিপি, জিএস, এজিএস, নির্বাচিত হয়।

শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকে  ভিপি, জিএস, ও এজি এস নির্বাচিত হন নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বাবুল, শাহানেওয়াজ পারভেজ,মাইনুদ্দিন শাহীন।সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে ইকবাল রশিদ অপু, মনজুর এলাহী,শামসুদ্দিন দুলাল,ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে খন্দকার আবু আশফাক,রকিবুল ইসলাম বকুল ও মোস্তাকুর রহমান।শহীদুল্লাহ হল থেকে আখতারুজ্জামান খোকন,মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির ও মোহাম্মদ গোলাম ফারুক। মুহসীন হল থেকে শাজাহান হাওলাদার সুজন, সাইদুর রহমান সাইদ ও গাজী কামরুল ইসলাম।

সূর্যসেন হল থেকে গোলাম মর্তুজা,সাইদুল হক সাইদ ও নুরুল ইসলাম খান। জসিমউদ্দীন হল থেকে শাহ মোহাম্মদ এরশাদুল হক,জামালুর রহমান ও হাবিবুর রহমান হাবিব।জিয়াউর রহমান হল থেকে মনোয়ার হোসেন রানা,আনোয়ারুল ইসলাম ও আব্দুল হাই ও কুয়েত মৈত্রী হল থেকে তাহমিনা আখতার, আফরোজা খন্দকার ও তাহমিনা রুশদী যথাক্রমে ভিপি, জিএস, ও এজি এস নির্বাচিত হন।

এবার ডাকসু  নির্বাচনে  ছাত্রদল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন  করতে পারেন   ২০১৫-১৬  শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবিদুল ইসলাম খান। তিনি ছাত্রদলের  ঢাবি শাখার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক। জুলাই আন্দোলনে সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে সবার কাছেই পরিচিত মুখ তিনি।

জিএস পদে নির্বাচন করতে পারেন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের উইমেন এন্ড স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর বারী হামিম। তিনি কবি জসিমউদ্দীন হল ছাত্রদলের আহব্বায়ক ও কমল মেডি এইডের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ উদ্যোগে নানা সেবামূলক কাজের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।
এছাড়া এজিএস পদে লড়তে পারেন বিজয় একাত্তর হল  ছাত্রদলের আহব্বায়ক তানভীর  আল  হাদী মায়েদ।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, ঢাবি ছাত্রদল সবচেয়ে সুশৃঙ্খল একটি ইউনিট। তারা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে শুরু থেকে লড়াই করেছে। আমরা আশা করছি এবার ও সেই শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় সংগঠন ছাত্রদলকেই বেছে নেবে।

ছাত্রশিবির:

অপরদিকে অতীতের সব গ্লানি মুছে এবারের ডাকসুতে বিজয়ী হয়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে চায় ইসলামী ছাত্রশিবির। ইতোমধ্যে সংগঠনটি রমজানে শিক্ষার্থীদের জন্য ইফতার, হলে হলে ঠান্ডা পানির ফিল্টার স্থাপন, ফাস্ট এইড বক্স ইত্যাদি সেবামূলক কাজের মাধমে  শিক্ষার্থীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে সংগঠনটি।
এবারের ডাকসুতে ভিপি পদে নির্বাচন করবেন ঢাবি ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক   আবু সাদিক কায়েম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬ -১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। জুলাই আন্দোলনে কার্যকরী ভূমিকা রাখায় তিনি সবার কাছেই পরিচিত মুখ।

জিএস পদে নির্বাচন করবেন ঢাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ। তিনি বিতার্কিক ফরহাদ নামেও সবার কাছে পরিচিত। তিনি সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

এজিএস পদে নির্বাচন করবেন ঢাবি শিবিরের সেক্রেটারি মহিউদ্দীন খান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে ভালো ফলাফল করায়  তিনি বিভাগের সকল শিক্ষকের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন।
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এইবার ডাকসু হবে অংশগ্রহণমূলক। সবার উপস্থিতি ও সবার পরামর্শক্রমে আমরা প্যানেল দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্য প্রতিনিধি বেছে নিক এটাই চাওয়া আমাদের। আমরা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাবো।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ:

নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা পিছিয়ে নেই। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করছি। এবারের ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর প্যানেল আমরা ঘোষণা করেছি।  আশা করছি, আমাদের প্রচেষ্টা শিক্ষার্থীদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠবে। সংগঠনটির অন্য নেতারাও জানান, এবার তারা একটি পূর্ণাঙ্গ ও শক্তিশালী প্যানেল দিয়েছেন।
সংগঠনটি থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করবেন ইয়াসিন আরাফাত, জিএস পদে খাইরুল আহসান মারজান ও এজিএস পদে নির্বাচন করবেন সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ গতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ:

জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে গড়ে ওঠা এ ছাত্র সংগঠনটি ডাকসুতে তাদের প্যানেলের নাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ। ভিপি পদে লড়বেন আব্দুল কাদের, জিএস পদে লড়বেন আবু বাকের মজুমদার ও এজিএস পদে লড়বেন  আশরেফা খাতুন।

ছাত্রঅধিকার পরিষদ:

২০১৯ সালের মতো আবার ডাকসু নির্বাচনে চমক দেখাতে চায় এ ছাত্রসংগঠনটি। ভিপি পদে লড়বেন বিন ইয়ামিন মোল্লা, জিএস পদে লড়বেন সাবিনা ইয়াসমিন ও  এজিএস পদে লড়বেন রাকিবুল ইসলাম।

বামজোট:

বাম জোটের পক্ষ থেকে ভিপি পদে মনোনয়ন নিয়েছেন শামসুন্নাহার  হল ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি এবং জিএস  পদে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবির সভাপতি মেঘমল্লার বসু ও এজিএস পদে নির্বাচন করবেন  জাবির আহমেদ জুবেল।
সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়ন ফর্ম নেন তারা।

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর সংবাদ সম্মেলনে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু।


স্বতন্ত্র প্যানেল উমামা ফাতেমার :

জুলাই আন্দোলনে সবার পরিচিত মুখ উমামা ফাতেমা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি একটি স্বতন্ত্র প্যানেল করবেন বলেও জানিয়েছেন। আজ ঘোষিত হতে পারে সেই প্যানেল। সূত্রে জানা গেছে সেই প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়বেন উমামা ফাতেমা, জিএস পদে লড়তে পারেন ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া ও এজিএস পদে লড়তে পারেন সাংবাদিক সমিতির বর্তমান সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি।

DU ফার্স্ট প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করবেন স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদের আহব্বায়ক জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ,জিএস পদে নির্বাচন করবেন জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপির) যুগ্ন সদস্য সচিব  ও সবার পরিচিত মুখ মাহিন সরকার ও এজি এস  পদে লড়বেন ফাতেহা শারমিন এনি।

এছাড়া  এককভাবে ভিপি  ও এজিএসের পদে লড়বেন ক্যাম্পাসে  দুই পরিচিত মুখ ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম হোসেন ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান জিম। শামীম   বলেন, 'আমাদের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দরকার। যিনি ছাত্রদের জন্য কথা বলবেন, শিক্ষার্থী ভয়েস হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করবেন। এখন আমি যদি কোনো প্যানেল থেকে প্রতিনিধিত্ব করি, তখন বিষয়টি এমন দেখাবে যে, আমি তো তাদেরই নেতা এবং অমুক ব্যক্তির আদর্শ প্রচার করি। আমার তো এমন কোনো আদর্শ নেই। আমার আদর্শ একটাই, যখন আমার কোনো ছোট ভাই-বন্ধুরা কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হবে তখন তাদের সেই ভয়েসটা রেইজ করার জায়গা তৈরি করে দেব এবং সেই ভয়েসটি হব আমি।'

ওপরদিকে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ জিম। যিনি আন্দোলন চলাকালে সর্বপ্রথম ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলন করেছেন এবং  ছাত্রলীগ কর্তৃক হামলার স্বীকার হয়েছেন।তিনি  বলেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে কোনো পিছুটান আমার সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবেনা। যেমনিভাবে কোনো পিছুটান বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি সেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে। আপনাদের কাছে এটাই আমার কমিটমেন্ট।

শিক্ষার্থীরা বলছে, আমরা কোনো দল, মত বুঝিনা আমাদের জন্য যারা কাজ করেছে আমরা তাদেরকেই আগামী নেতৃত্বে চাই।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুই সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি পরীমনি

ডাকসু নির্বাচন:  প্যানেল ঘোষণা করলো ছাত্রসংগঠনগুলো

বগুড়ার সোনাতলায় হাট-বাজারে প্রচুর আমন ধানের চারার আমদানি

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার

বগুড়ায় ১৯ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিলেন পুলিশ সুপার

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষক হত্যা মামলায় এক ব্যক্তির যাবজ্জীবন